গলাচিপাপটুয়াখালীসারাদেশ

তালিকার ১ দিন পরেই মৃত্যু, স্বপ্নের ঘর হাতছাড়া ফাতেমার

সরকারের একটা ঘর পাওয়া আমার কাছে আছিল স্বপ্নের মতোন। ঘরের তালিকা হইছে কিন্তু তালিকা হওয়ার এক দিন আগেই আমার বাবা মইরা যায়। আর এতেই একটি ঘরের স্বপ্ন আমার কাছে স্বপ্ন রইয়া গ্যাছে।

কথাগুলো বলছিলেন গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আটখালী গ্রামের ফাতেমা বেগম (৪২)। স্বামী পরিত্যক্তা ফাতেমা দিনমজুর বাবার পরিবারে কোনোরকম খেয়ে না-খেয়ে বসবাস করে আসছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে অন্যের পানের বরজে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। কাজ করলে প্রতিদিন ২০০ টাকা আয় হয়। আর এ আয় দিয়ে চলে তার সংসার।
সরেজমিনে ফাতেমার ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো অন্যের বাড়ি কাজ করে ছেলের জন্য দুপুরে রান্নার আয়োজন করছেন। রান্না বলতে ভাত আর কিছু সবজি। অপেক্ষায় আছেন ছেলে দুপুরে খেতে আসবেন। এমন সময় বাইরে মানুষের আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসেন তিনি। অপরিচিত লোকজন দেখে প্রথমে কিছুটা থমকে যান।
পরে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমার ভাগ্য আরো খারাপ হইয়া গ্যাছে। কোনো রকম টিন কাঠ ও হোগলা পাতার বেড়া দিয়ে একটা ঘর করছি। এই ঘর করতে আমার চাইর বছর সময় লাগছে। একটু একটু কইরাই ১১ হাজার টাহা জমাইয়া ঘর বানাইছি। আমাগো নিজের কোনো জাগা নাই। ওয়াবদা রাস্তার কুলে (পাশে) থাহি। একটা ঘরের লইগ্যা বাবায় আবেদন করছিল। কিন্তু তালিকা হওয়ার একদিন আগেই মইরা যায়। বাবায় মইরা যাওয়ার লগে লগে আমার ঘরও মইররা যায়।’
কথাগুলো বলে আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে দেন ফাতেমা। তিনি আরো জানান, ছয় মাস আগে আমাগো তশিলদারের (তহশিলদার) কাছে আরেকটি আবেদন করছি। কিন্তু হেইয়ার কোনো খবর নাই। আমার লগে য্যারা আবেদন করছিল হ্যারা এহন ঘরে থাহে। প্রত্যেক আমাবইস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে আমার ঘরের ভিডা ডুইব্বা যায়। চুলায় রানতে পারি না।
এ বিষয় ওই গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমাগো অবস্থাও ভালো না। কিন্তু আমাগো চেয়ে ফামেতার অবস্থা খুবই খারাপ। সংসার চাইলাইতে যাইয়া নিজে ২০০ টাহার হাজিরায় পানের বরজে কাম করে। ফাতেমা একটা ঘর পাইলে অন্তত একটু সুখে থাকতে পারতো।’
এ বিষয় আটখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিত কুমার দত্ত বলেন, ফাতেমা স্বামী পরিত্যক্তা। ওর বাবা কয়েক মাস আগে মারা গেছে। অনেক কষ্ট করে নদী ভাঙনির পাশে বসবাস করছে। ফাতেমা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেলে স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে পারত।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার এ ধরনের মানুষের জন্যই এ ঘরের ব্যবস্থা করেছে। আমি খুঁজে দেখব তালিকায় তার নাম আছে কি-না। না থাকলে যদি তিনি পাওয়ার যোগ্য হন অবশ্যই তার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker