সারাদেশ

ঈদকেন্দ্রিক বিয়ের আয়োজন যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে

ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছেন সবাই। আর টানা ছুটিতে আত্বীয় স্বজনকে একসঙ্গে পাওয়ার সুযোগে নীলফামারী জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চলছে বিয়ের ধুম। শহর কিংবা গ্রাম-সবখানেই বাজছে বিয়ের সানাই। সম্প্রীতির বন্ধনে এ যেন ঈদকেন্দ্রিক বিয়ে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

ঈদের পরদিন থেকেই শুরু হয় এই বিয়ের ধুম। আর ঈদের খরচাপাতির পর বিয়ের খরচাপাতিতেও কমতি ছিলনা। গ্রামের বিয়েগুলো মেয়ে ও ছেলে পক্ষের নিজ নিজ বাড়িতে আয়োজন করা হলেও শহরের বিয়েতে খালি নেই কমিউনিটি সেন্টারগুলো।

শনিবার (৫ এপ্রিল) দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে চলছে বিয়ের অনুষ্ঠান। আর এতে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন বিয়ে পড়া কাজি ও মাওলানা। সেই সাথে বিউটি পার্লার আর ডেকোরেশন দোকানগুলোর সিরিয়ালও প্রচুর।

যোগাযোগ করা হলে নীলফামারী জেলা কাজী সমিতির পক্ষে জানানো হয়, ঈদের সময় আত্বীয় স্বজনসহ সবার উপস্থিতিতে সামাজিক সম্প্রীতি যেমন বাড়ছে, তেমনি ঈদের উৎসবও বর্ণিল হচ্ছে।

ঈদের পর দিন থেকে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নীলফামারী জেলায় প্রায় তিনশতাধিক বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শনিবারও দুপুরে ও রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলমান রয়েছে। হয়তো আরও দেড়শতাধিক বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। এতে এলাকাভিত্তিক কাজীরা বিয়ে নিবন্ধন করতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

সুত্র মতে, পবিত্র রমজান মাসের কারণে মুসলিম পরিবারে ঈদের আগে বিয়ের আয়োজন তেমন হয়নি। তবে ঈদের দুদিন একদিন পর থেকে শুধু নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়  সৈয়দপুরে দুই শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে আত্বীয়স্বজন ও চাকরিজীবীরা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করায় অনেকে বিয়ের জন্য এই সময়টিকেই বেছে নেন।

 বিয়ে নিবন্ধনকারী (কাজি) সাইদুল ইসলাম বলেন, অভিভাবকেরা এখন সরকারি ছুটির সুবিধা নিয়ে ছেলেমেয়ের বিয়ে করার জন্য এই সময়টিকেই বেছে নিচ্ছেন। গত তিন দিনে আটটি বিয়ে নিবন্ধন করেছি। তবে অনেক বরের বিয়ে শহরের বাইরে হওয়ায় তাদের রেজিস্টার আমার কাছে থাকে না।

এদিকে একসঙ্গে এত বিয়ের আয়োজন হওয়ায় বিউটি পার্লারগুলোও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। সৈয়দপুর শহরের  রূপ এডিশন বিউটি পার্লারের মালিক কোহিনুর লিপি  জানান, আমাদের এক দিনে তিন থেকে চারটি বউ সাজাতে হচ্ছে। শহরের বাইরে যারা বিয়ে করছেন, তাদের বরযাত্রীদের মেকআপও আমরা করছি।

শহরের একটি পার্লারে বউ সাজতে আসা কনে বলেন, ঈদের সময় বিয়ের আয়োজন মজার হয়। জীবিকার কারণে আত্মীয়রা সারা বছর কর্মব্যস্ত থাকেন। কেবল বছরের এই ঈদ উৎসবেই নাড়ির টানে সবাই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসন। এ সময় আত্বীয়স্বজন সবাইকে একসঙ্গে কাছে পাওয়ায় বিয়ের এ সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিন দিন মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঈদের ছুটিতে তাই বিয়ের এ আয়োজন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

ড্রিমপ্লাস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী তৌহিদার রহমান বলেন, আগামী ১০ দিন পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বুকিং রয়েছে। এখানে দিনে এবং রাতে আলাদা বুকিং দেওয়া হচ্ছে। কিছু অতিথি দিনে-রাতে একসঙ্গে বুকিং নিয়েছেন। এদিকে বিয়ের হিড়িক পড়ায় ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, কারসহ যানবাহনের সংকট দেখা দেয়।

অতিরিক্ত টাকায়ও যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে একই পরিবহন দিয়ে এক দিনে একাধিক বিয়েবাড়িতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপর দিকে ডেকোরেটরের মালিকেরাও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও অনেকে ডেকোরেটরসামগ্রী ভাড়ায় পাননি।

কামারপুকুর এলাকার বাবুল হোসেন বলেন, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে তিন দিন চেষ্টা করেও ডেকোরেটরের সামগ্রী ভাড়া পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে নিজেই কম দামে কাপড় কিনে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি। গাড়ি চালক বাঁধন মিয়া জানান, আগামী চার দিনের জন্য বিয়ের ভাড়া রিজার্ভ করা রয়েছে। বেশিরভাগ বিয়ের ভাড়া আগেই নেওয়া হয়েছে।

শনিবার নীলফামারী শহরের আশা কমিউনিটি সেন্টার সহ বিভিন্ন স্থানে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নীলফামারী জেলার আশেপাশে জেলাগুলোর শহর গ্রামে একই অবস্থা। বিয়ের অনুষ্ঠানের কমতি নেই। 

সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্য আব্দুল গফুর সরকার বলেন, ঈদের পর দিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ১৪টির বেশি বিয়ের দাওয়াত পেয়েছি। একই দিনে একাধিক অনুষ্ঠান থাকায় দাওয়াত রক্ষা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে অল্প সময়ের জন্য হলেও উপস্থিত থাকার চেষ্টা করছি।

নীলফামারী শহরের আতিয়ার রহমান জানান, গত চারদিনে আমাকে ১২টি বিয়ে অনুষ্ঠানের দাওয়াত পালন করতে হয়েছে। তারা সকলেই আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব। সর্ম্পকটা গভীর বলেই বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছে। এদিকে বিয়ে অনুষ্ঠানের উপহার প্রদান হলো রেওয়াজ। তাই উপহার কিনতেও দোকানগুলোতে ভীড়ের কমতি নেই। 

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker