সারাদেশ

ঈদ সামনে রেখে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়

মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিবারের মতো এবারও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। পুলিশ ও র‍্যাবের নজরদারি এড়াতে তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে গোপনে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে, এমনকি সাধারণ যাত্রীদের ব্যাগেও মাদক বহনের চেষ্টা চলছে।

বগুড়া, বগুড়ার আশপাশের জেলা এবং উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ সমাজকে টার্গেট করে এসব মাদক সেবনের জন্য আকৃষ্ট করা হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে একাধিক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‍্যাবের অভিযানেও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, চক্রের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা পিপিএম বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারিরা তৎপরতা বাড়িয়েছে, তবে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। কোনোভাবেই মাদক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক নির্মূলে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলি, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা হয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক চোরাচালানে জড়িতরা নানা কৌশলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাতে সীমান্তে দেশি অস্ত্রসহ সশস্ত্র দল অবস্থান নেয়।

নির্দিষ্ট সংকেত পেলে তারা মাদক বহন করে শহর ও গ্রামের নির্ধারিত স্থানে সরবরাহ করে। প্রতিটি চালানের জন্য তারা মোটা অঙ্কের কমিশন পায়। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় মাদক চোরাচালান আরও বেড়ে যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাজিউর রহমান জানান, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”

বগুড়ার মাদক স্পট হিসেবে অধিক পরিচিত মহাস্থান ও মোকামতলার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ঈদের সময় অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মাদকের প্রভাব বাড়ছে, যা সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বগুড়া সদর উপজেলার কালিতলা এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, “প্রতিবার ঈদের সময় দেখা যায়, মাদক ব্যবসায়ীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়। প্রশাসনের তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও তারা কৌশলে মাদক ছড়িয়ে দেয়। এর একটা কঠোর প্রতিকার দরকার।”

বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী কেজিএম ফারুক বলেন, “শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এই বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম মাদকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হয়।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং সন্দেহজনক কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানানো।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণকে। তাহলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker