বাণিজ্য

আইএমএফের ঋণের সব শর্ত পূরণ বাংলাদেশের, পিছিয়ে রাজস্ব আদায়ে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার চতুর্থ কিস্তি পেতে বেশির ভাগ শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এর ফলে বাধাহীনভাবেই ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে বলে মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং পরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে ৩০ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।

এনবিআরের হিসাব অনুসারে, গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দেশের মুদ্রানীতির পরিবর্তন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ সংশোধন এবং মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের মিট টার্ম রিভিউ মিটিং চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নতুন মুদ্রানীতির মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

এ ছাড়া আইএমএফের ঋণ পেতে রাজস্ব ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে জুন মাসে ‘বাংলাদেশ : টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্ট—ইন্টারেস্ট রেট করিডর অ্যাডাপশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও দায়বদ্ধতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল। এটি মূলত মূল্য স্থিতিশীলতাকে মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করার প্রস্তাবনা ছিল।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সংশোধনটি ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য ঘোষিত রিজার্ভ মানিভিত্তিক মুদ্রানীতি থেকে নতুন ইন্টারেস্ট রেটভিত্তিক মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুখপাত্র হুসনে আরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইএমএফের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের সঙ্গে শেষ বৈঠকের পর আইএমএফ এই বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে।

এদিকে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসেছে এবং ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা অবস্থান করবে। একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিন মাস ধরে দেশের মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। যদি এই স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, তবে গ্রাহকরা ডলার ধরে রাখার প্রতি আরো আগ্রহী হতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার রেটের ওঠানামা অনুমোদনের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছে। ক্রলিং পেগ সিস্টেম সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।’ আইএমএফের পরামর্শ অনুসারে বাংলাদেশ মে মাস থেকে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করছে।

আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও শক্তি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। আইএমএফের শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।

আইএমএফের আরেকটি বড় শর্ত ছিল দেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বাড়ানো। তবে ২০২৩ সালের মে মাসে আইএমএফ সরকারের অনুরোধে এই লক্ষ্য কমিয়ে দেয়। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, ৩০ জুনের মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ২০.১১ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া।

তবে মে মাসের শেষে আইএমএফ এটি কমিয়ে ১৪.৭৯ বিলিয়ন ডলার করে দেয়। ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ১৬.৭০ বিলিয়ন ডলার। ঋণ কর্মসূচির আগের প্রতিটি কিস্তিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker