নওগাঁয় কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম, মজুতবিরোধী অভিযানের দাবি
দেশের অন্যতম প্রধান ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুম সত্ত্বেও মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় মিলারদের সিন্ডিকেটকে এর জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে **২-৪ টাকা** আর খুচরা বাজারে বেড়েছে **৫-৬ টাকা**।
ভরা মৌসুম সত্ত্বেও মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় মিলারদের সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের চিত্র:
নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে:
- জিরাশাইল: ৭০-৭২ টাকা (আগে ৬৬-৬৮ টাকা)
- কাটারিভোগ: ৬৪-৬৮ টাকা (আগে ৬২-৬৪ টাকা)
- শুভলতা: ৬০-৬২ টাকা (আগে ৫৭-৫৮ টাকা)
- ব্রি আর-২৮: ৬২-৬৪ টাকা (আগে ৫৯-৬০ টাকা)
- স্বর্ণা-৫: ৫৫-৫৬ টাকা (আগে ৫৩-৫৪ টাকা)
অপরদিকে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে:
- জিরাশাইল: ৭২-৭৫ টাকা (আগে ৬৮-৭০ টাকা)
- কাটারিভোগ: ৭০-৭৫ টাকা (আগে ৬৫-৬৮ টাকা)
- শুভলতা: ৬২-৬৪ টাকা (আগে ৫৯-৬০ টাকা)
- ব্রি আর-২৮: ৬৫-৬৬ টাকা (আগে ৬২-৬৩ টাকা)
- স্বর্ণা-৫: ৫৮-৬০ টাকা (আগে ৫৫-৫৬ টাকা)
খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল বলেন, “মিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল দিচ্ছেন না। ২০ বস্তার চাহিদা দিলে চাল দেন ৫-৭ বস্তা। তার ওপর বস্তা প্রতি ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভরা মৌসুমে বাজারে এভাবে চালের দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতের কারণেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।”
খুচরা চাল ব্যবসায়ী মেসার্স বুলেট রাইস সাপ্লায়ার্সের প্রোপাইটার মকবুল হোসেন বলেন, “মিলগুলোতে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা না হওয়াই মিলাররা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করলে কিছুটা চালের দাম কমে আসবে।”
আড়তদার পট্টির সততা রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, “দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে।”
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, “চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান জোরালো পদক্ষেপ নেই। যার ফলে বাজারে এই নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। শৃঙ্খলা না থাকায় চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”