জমি, বাসাবাড়ি ও কোনো স্থাপনাসহ ব্যক্তিগত সম্পত্তি হস্তান্তরে জমি নিবন্ধন উৎসে কর কিছুটা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ৩০ নভেম্বর এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন ইস্যু করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এনবিআরের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রজ্ঞাপনটি ইস্যু করেন এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ৩৪৩ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উৎসে কর বিধিমালা সংশোধন করল এনবিআর। যা জমি নিবন্ধনে মৌজা অনুযায়ী বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার কর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনবিআরের এই আদেশ অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার সকল মৌজার জমি ক, খ, গ, ঘ ও ঙ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সব মৌজার জমিকে ক, খ, গ ও ঘ শ্রেণির আওতাভুক্ত করে নিবন্ধনের সময় উৎসে কর দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬-১৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ হবে।
কাফরুল, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা মডেল থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, চকবাজার থানা, লালবাগ থানা, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও গেণ্ডারিয়া থানার অন্তর্গত সব জমি নিবন্ধনে ( ঙ শ্রেণি ব্যতীত) উৎসে কর দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটা হবে। ‘ঙ’ শ্রেণির উৎসে কর ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকার মধ্যে। খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, উত্তরা পশ্চিম, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা, পল্লবী, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর মডেল, দারুস সালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর, গাজীপুর, জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জ থানার অন্তর্গত সব মৌজার জমি নিবন্ধনে উৎসে কর (ঙ শ্রেণি ব্যতীত) দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ থেকে চার লাখ টাকার মধ্যে। আর ‘ঙ’ শ্রেণির জমিতে ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকার মধ্যে হবে উৎসে কর।
চট্টগ্রাম জেলার খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও গাজীপুরে পূর্ব ও পশ্চিম টঙ্গীর জমি নিবন্ধনে উৎসে কর দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার, এক লাখ ও তিন লাখ টাকার মধ্যে।
একই সঙ্গে ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলা, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, চকবাজার, বান্দগাঁও, ডাবলমুরিং, পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, বায়েজিদ, সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে সব মৌজার জমি নিবন্ধনে উৎসে কর ৬ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২০, ৮০ এবং দুই লাখ টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ হবে।
শ্রেণি ‘ক’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণির জমিতে অবস্থিত স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা হারে অথবা জমির দলিল মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি হবে। আর ‘ঙ’ শ্রেণির জমির স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসে প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা হারে অথবা জমির দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যা বেশি হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা হারে অথবা স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেসের দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৬ শতাংশের মধ্যে যা বেশি হবে।
তবে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানার আবাসিক ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারে সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা কর দিতে হবে। আর বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গমিটারে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর উৎসে কর বিধিমালায় জমি নিবন্ধনের সর্বোচ্চ করহার ২০ লাখ থেকে কমিয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছিল। দলিল মূল্যে ৮ ও ৬ শতাংশের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছিল। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় চূড়ান্ত করে সরকার। জমি বিক্রিতে চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ আর ফ্ল্যাট নিবন্ধনে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা বা চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ; যা বেশি হবে তা কর হিসেবে দিতে হবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.