ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্কারের আহ্বান সারজিস আলমের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’।শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এ দলের নাম ঘোষণা করা হয়। মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) পদে আছেন সারজিস আলম।
সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুরোধ করবো, দয়া করে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তোষামোদির রাজনীতিতে লিপ্ত হবেন না। আমরা অনুরোধ করবো, বাংলাদেশ পুলিশ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে খুনি হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছে,এই প্রতিষ্ঠান যেন তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে। আমরা অনুরোধ করবো, সরকারি অফিস, আদালত, পুলিশ, বিচারক, আমলারা যেন জনগণের থেকে ঘুষ গ্রহণ না করেন। দয়া করে জনগণের স্বার্থবিরোধী অন্যায় কাজে লিপ্ত হবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ এবং ১৯৭১-এর পরে একবিংশ শতাব্দীতে নতুন আরেকটি অধ্যায় রচিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে আমরা ফ্যাসিস্ট বিরোধী যে লড়াই করেছি, খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা যারা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি, বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, মত, ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে আমরা আজ এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট বিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি, যারা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আমরা শুধু আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করতে চাই, যদি আমরা পাঁচ আগস্টের পর, খুনি হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যে স্বপ্ন দেখেছিলাম,সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু দিনশেষে দেশের এবং মানুষের জন্য যেটা মঙ্গলজনক, সেটাতে আমরা সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকে, তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে অপ্রতিরোধ্য।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুরোধ করবো, দয়া করে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তোষামোদির রাজনীতিতে লিপ্ত হবেন না। আমরা অনুরোধ করবো, বাংলাদেশ পুলিশ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে খুনি হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছে,এই প্রতিষ্ঠান যেন তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে। আমরা অনুরোধ করবো, সরকারি অফিস, আদালত, পুলিশ, বিচারক, আমলারা যেন জনগণের থেকে ঘুষ গ্রহণ না করেন। দয়া করে জনগণের স্বার্থবিরোধী অন্যায় কাজে লিপ্ত হবেন না।”
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুনি হাসিনা নিজ হাতে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষ নিয়োগ পায়, দুর্নীতিবাজরা নয়।”
তিনি বলেন, “আমাদের সামনে আমাদের আহত মুক্তিযোদ্ধারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্দলীয় ফাইটাররা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। খুনি হাসিনার বিচার যেন আমরা একসঙ্গে করি। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায়, কোনো অপরাধীর জন্য আমরা থানায় বা বিচারকের কাছে সুপারিশ করতে যাব না।”
তিনি নতুন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়েও কথা বলেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলামকে সংশোধন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীর হাতে গড়ে তোলা যায়। আমরা আগামীর বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দল যদি নিজেদের ছোটখাটো স্বার্থকে একপাশে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তাহলে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব।”
তিনি বলেন, “আমরা আজকের এই মঞ্চ থেকে একটি শপথ নিতে চাই—দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে, আমরা যেন আমাদের দায়িত্বের প্রতি খেয়ানত না করি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যেন সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় থাকে। কেউ যেন কাউকে প্রতিপক্ষ মনে না করে। আমরা যদি বড় রাজনৈতিক দল হয়েও ছোট দলগুলোর জন্য জায়গা না দেই, তাহলে আমাদের মধ্যেও স্বৈরাচারী মানসিকতা জন্ম নিতে পারে।”
তিনি খুনি হাসিনার শাসন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা যেন খুনি হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নিই এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ি। আমরা দিন শেষে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব। আমরা লড়াই করবো, রাজপথে কিংবা বিজয়ে দেখা হবে। বাংলাদেশের এই নতুন রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে থাকবেন, সমর্থন করবেন, দোয়া করবেন। আপনাদের সঙ্গে আবারো দেখা হবে-রাজপথের সংগ্রামে কিংবা বিজয়ে।”