গাজীপুরের কাশিমপুর মেট্রো থানার সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা বুধবার বিকেলে কালিয়াকৈর-নবী নগর সড়কের চক্রবতী মোজার মিল নামক এলাকায় তান্ডব চালিয়ে যানবাহন ভাংচুর করেছে। এসময় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা ৪-৫টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে কয়েক শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। ওই সময় শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে যানবাহনগুলো পড়ে যায়।
এসময় এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শত শত শ্রমিক সড়কের উপর শুয়ে পড়ে বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি পোশাক তৈরির কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি করে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা দ্বীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করে।
শ্রমিকরা জাহাঙ্গীরের ব্যবহৃত মোটর সাইকেটি ভাংচুর করে। এসময় তার সাথে থাকা অন্য সহকর্মী বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান আমির হোসেন রিয়েল ও প্রতিদিন বাংলাদেশের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি আবু সাইদকেও মারধর করে আহত করেছে।
পুুলিশ,শ্রমিক স্থানীয়রা জানান,বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ডিসেম্বর মাস থেকে প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক কারখানার ভিতর ও কালিয়াকৈর নবী নগর সড়কে আন্দোলন করে আসছিল। গতকাল মঙ্গলবার মোজার মিল এলাকায় এ পার্কের শ্রমিকরা বিশাল সমাবেশ করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবী তুলেন।
একটি সুত্র জানায়, চলতি মাসে বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রনালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয় নতুন ক্রয়াদেশ না থাকয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ঋন খেলাপি হওয়ায় কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। ফলে ১৬ ডিসেম্বও থেকে এ বেক্সিমকো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪২ হাজার শ্রমিকদের রোজি বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা নবীনগর অংশ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। এসময় গণপরিবহন ভাঙচুরের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
এঘটনায় দীপ্ত টিভি গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম ,বাংলাভিশন টিভির চিত্র সাংবাদিক আমীর হোসেন রিয়েল এর উপর অতর্কিত হামলা চালায় উত্তেজিত শ্রমিকরা । এতে আহত হন সাংবাদিক সাহাদাৎ হোসাইনসহ অন্তত আরও ৩ জন সাংবাদিক আহত হয় ।
মহানগরীর মৌজার মিল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে শ্রমিকরা। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে মহাসড়কটি ব্যবহারকারী যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা। এসব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কয়েক দফায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।
গত ২১ ডিসেম্বর বিক্ষোভে শ্রমিকদের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ২১ জানুয়ারী দুপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৪২ হাজার শ্রমিক একত্রিত হয়ে বিশাল এক গনসমাবেশ করে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াাল পার্কের শ্রমিকরা দুপুর ৩ টা থেকে চন্দ্রা নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে।এসময় মহাসড়কে অবরোধে আটকে পড়া গণপরিবহন ভাংচুরের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলা ও সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মুঠোফোনে গণপরিবহন ভাংচুর ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আবু তালেব জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে চন্দ্রা নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে পুলিশ।