গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠে দিগন্তজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ ।আর এসব মাঠে চাষ হচ্ছে সরিষা চাষ এর পাশাপাশি বাড়তি সুযোগ হিসেবে কৃষকরা বেছে নিয়েছে বাণিজ্যিক মৌচাষে ।এছাড়াও এসব সরিষা মাঠ থেকে মধু উৎপাদন করছে কৃষকরা ।আর এসব মধু উৎপাদনের আয়ের অংশের টাকায় চলছে প্রায় ২০ পরিবার ।এবার এ সরিষার মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার মধু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মৌচাষীদের দাবি ।
এদিকে সরিষা ফুল থেকে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করায় বাড়ছে সরিষার উৎপাদন ।বাড়তি সরিষা উৎপাদন ও মধু সংগ্রহের ফলে একদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে হচ্ছে লাভবান ,অপরদিকে মধুতে পুষ্টির ঘাটতি পূরন হচ্ছে ।
এলাকাবাসী, মৌচাষী ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় উপজেলায় আমন ধান কাটার পরে বোরো ধানের চারা রোপনের মধ্যবর্তী সময়টাকে কাজে লাগাতে কৃষকরা দানাদার শস্য সরিষা উৎপাদনে লাভজনক ফসল হিসেবে আবাদ করে।
মধ্যবর্তী সময়ে ১০০ থেকে ১২০ দিনে এ ফসল ঘরে তোলা যায় বলে সরিষা চাষে উৎসায়ী অনেক কৃষক ।এবার চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে ।যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি ।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে দিগন্ত বিস্তিরিত মাঠে হলুদের চাদরে ঢেকে আছে ।সকালে সোনালী রোদে আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে এসব সর্ষে হলুদের মাঠে । আর এসব সৌন্দর্যে মুগ্ধ আসে পাশের জনতারা ।
এদিকে এই সময় টাকা কাজে লাগিয়ে ঢালজোড়া ইউনিয়নের বেনুপুর এলাকায় মোহাম্মদ আলী নামে এক চাষি পাশের দেওয়ারবাজার বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ করেছেন। তার মৌচাষে তিনিসহ ৩-৪ জন লোক কাজ করেন। অন্যদিকে পাশের বাচ্চুরী এলাকায় ঢাকা থেকে প্রশিকা নামে একটি এনজিও এসে মৌচাষ করেছে। তাদের মৌচাষেও ৩-৪ জন লোক কাজ করেন।
এ ছাড়া আরেকজন মৌচাষি ৩-৪ জন লোকের সমন্বয়ে সরিষা খেতের এক পাশে মৌচাষ করেছেন। সব মিলিয়ে মোট ৩৩০টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বসানো মৌবাক্স থেকে মৌমাছিরা উড়ে গিয়ে পাশের সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার মৌবাক্সের ভেতর চলে যাচ্ছে। বাক্সের ভিতরে মৌচাকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছিরা। প্রতিটি বাক্সের ভেতরে ৬ থেকে ৮টি ফ্রেমে মৌচাক থাকে। সপ্তাহখানেক পরপর এসব মৌবাক্স থেকে মৌমাছি সরিয়ে মৌচাক বের করা হয়।
পরে মৌচাক একটি স্টিলের ড্রামের ভেতরে নিয়ে ঘূর্ণায়মাণ যন্ত্রের মাধ্যমে মধু বের করা হয়। এসব মধু সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। সপ্তাহে বাক্সপ্রতি ৩ থেকে ৪ কেজি মধু উৎপাদন করা যায়।
সে হিসেবে সপ্তাহে ৩৩০ মৌবাক্সে প্রায় ৯৯০ থেকে ১৩২০ কেজি মধু উৎপাদন হয়। বর্তমান প্রতি কেজি মধুর বাজারমূল্য ৫০০ টাকা। সে হিসাব অনুযায়ী এ সরিষা মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার মধু বিক্রয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার এসব মধু খাঁটি, স্বাদ ও গুণগত মান অনেক ভালো হওয়ায় কিনে নিচ্ছে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় লোকজন। পাশাপাশি অয় পুঁজিতে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্য যুবকরাও মৌচাষে আগ্রহী হচ্ছে। অন্যদিকে মৌচাষের কারণে পরাগায়ন বেড়ে যাওয়ায় সরিষা ফসলের উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
ফসলের গুণগত মানও ভালো হয়। আর বাড়তি সরিষা উৎপাদন ও মধু সংগ্রহের ফলে একদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে মধুতে দেশের ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন সচেতন মহলের লোকজন।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে সরিষা চাষে বেশ মুনাফা হয়। আর সরিষার ফুল ও পাতা ঝরে পড়ায় জমি বেশ উর্বর হয়। সরিষা কাটার পর ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে সারের পরিমাণ কম লাগে। ফলে ধান চাষে উৎপাদন খরচ কমে যায় ও ফলনও হয় ভালো।
মৌচাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘৬ বছর ধরে মৌচাষ করে আসছি। মৌচাষে কৃষি কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন। এখানে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মৌচাষ করা যাবে। ফেব্রæয়ারির ১ম সপ্তাহে মৌবাক্স নিয়ে ফরিদপুরের কালোজিরার মাঠে যাবে। আবার কালিয়াকৈর উপজেলা মেদীআশুলাই লেচু বাগান, মধুপুর রাবার বাগানে মৌবাক্স বসাব।
এরপর যেখানে তিল চাষ হয়, সেখানেও মৌবাক্স বসাব।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এখানে এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সরিষা খেতে ৩ মৌখামারি মোট ৩৩০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। সেখান থেকে তারা মধু উৎপাদন ও বিক্রি করছেন ।