রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সাল শুরু হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পশ্চিমাদের শঙ্কা নিয়ে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারির সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফা ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত জয়ের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র।
ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলোর বিবৃতিতে নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের চোখে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক দপ্তর বলেছিল, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্রের জন্য পূর্বশর্তের ঘাটতি ছিল। লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের মতে, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিল।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পূর্বের বা অন্য দেশগুলোর অবস্থানগত পার্থক্য ছিল স্পষ্ট।
নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করলেও সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে থাকতে চেয়েছে। এ কারণে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
বিশেষ করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘাত-সহিংসতা, ব্যাপক প্রাণহানিতে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধীদলীয় নেতাদের দমন-পীড়নের অভিযোগে বেশ চাপের মধ্যে ছিল। জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা অন্তত চিঠি পাঠিয়ে ভিন্নমত দমনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তৎকালীন সরকারের জবাব চেয়েছেন। তৎকালীন সরকার ঢাকায় রাষ্ট্রদূতদের কাছে তাদের মতো করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ সম্পর্ক বলা হতো।
ভারতও এই সম্পর্ককে আঞ্চলিক অন্যদের জন্য অনুকরণীয় বলত। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সেই সম্পর্কে বড় ধরনের টানাপড়েন দেখা দেয়। সংখ্যালঘু নিপীড়ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, কূটনৈতিক মিশন অভিমুখে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। হামলা হয়েছে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে। গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরের সময় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন।
গত কয়েক মাসে গতি এসেছে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে নজিরবিহীন বৈঠক করে বিশেষ সম্পর্কের বার্তা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানালে তাঁকে ভুল বোঝানো হয়ে থাকতে পারে বলে প্রচার করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ পরিস্থিতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের মনোভাব কী হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন বিশ্লেষকরা।
চীন বাংলাদেশের পাশে আছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার সমুন্নত দেখতে চায়।