ফরিদপুরের চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের মোস্তফার বাড়ি থেকে এমপি ডাঙ্গী ভায়া বালিয়া ডাঙ্গী সংযোগ সড়ক। এক কিলোমিটার একটি সড়কের পাকাকরণের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় ১১ মাস ধরে। দীর্ঘদিন পাকা না করে ইটের কংক্রিট ফেলে রাখায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঁচুনিচু হয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে।
এতে সড়কের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন পাকা না করায় কংক্রিট উঠে যাওয়ার কারণে সড়কে যান চলাচল করছে না। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও নিচ্ছেন বেশি। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে ইটের কংক্রটি। সড়কের কয়েকটি জায়গায় ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে। রাস্তাটির বেহাল অবস্থা হওয়াতে এখান দিয়ে খুব কমই রিকশাভ্যান চলতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ গ্রামীণ সড়ক পুন:নির্মাণ প্রকল্পের (ভিআরআরপি) আওতায় চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের মোস্তফার বাড়ি থেকে এমপি ডাঙ্গী ভায়া বালিয়া ডাঙ্গী সংযোগ সড়কের ৯৭৬ মিটার পাকা করার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স সাদমান অ্যান্ড ব্রাদার্স। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭২ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
সড়কের কাজ শেষ করার সময় ছিল ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তিন মাসে ওই সড়কে ইট বিছানোর কাজ করে। এরপর (১৩ জুন) ঠিকাদার ৫২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেন। বিল তোলার পর গত বছর জুন থেকেই কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কাজ বন্ধ করে রাখার দুই মাস পর গত ১৭ আগস্ট তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেয়।
এ অবস্থার কারণে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার সুপারিশ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ফাজেল খার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা হারুন খান বলেন, সড়কটিতে আগে ইট বিছানো ছিল। সবাই সহজে চলাচল করতে পারত। আমরা তো ভাবছিলাম সড়ক পাকা হবে। চলাচলের জন্য আগের চেয়ে ভালো হবে। কিন্তু যা ভাবছিলাম ঠিক তার বিপরীত হলো। রাস্তাটির এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই। রাস্তা খারাপ হওয়ার ফলে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিলেও রিকশাভ্যান এ এলাকায় আসে না।
একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে কিছুদিন আগে আগুন লেগেছিল। রাস্তাটি খারাপ থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে অনেক সময় লেগেছে। গাড়ি আসতে দেরি হওয়ার কারণে আগুনে আমার যা ছিল সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য বাবুল মোল্লা বলেন, এ সড়ক দিয়ে এলাকার চারটি গ্রামের লোক যাতায়াত করেন। সড়কে নামলেই প্রত্যেককে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। আমি এ জনদুর্ভোগ দূর করতে অতিদ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাদমান অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো: সাদমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ ধরেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী জালাল উদ্দীন খান বলেন, আমি মৌখিকভাবে ঠিকাদারকে কয়েক দফায় কাজ শেষ করার জন্য বলেছি। তারপরও কাজ শুরু না করায় ২০ নভেম্বর আমি কাজটির চুক্তি বাতিলসহ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে ফরিদপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চিঠি দিয়েছি। চিঠি দেওয়ার ছয় মাস পরও আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি।
ফরিদপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শহীদুজ্জামান খান বলেন, যে প্রকল্পের আওতায় ওই সড়কের কাজ হচ্ছে তা আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। ঠিকাদার অতিদ্রুত কাজটি শেষ করবে বলে জানিয়েছেন।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.