সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলো সন্তান
মাদারীপুরের ডাসারে এক বৃদ্ধা মায়ের সম্পত্তি ও ব্যাংকে থাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে সন্তান। সৈয়দা শান্তি নাহার (৭০) নামে বৃদ্ধা মায়ের সম্পত্তি ও ব্যাংকে থাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় এমন অভিযোগ উঠেছে তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বৃদ্ধা তার ছেলেকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
শুক্রবার (৭ জুন) সরজমিনে গিয়ে জানাযায়, ডাসার উপজেলার পূর্ব ডাসার গ্রামের শান্তি নাহার নামে এক বৃদ্ধা নিজের বড় ছেলে সৈয়দ জানে আলম স্বপনের কাছে ছিলেন। সেখানে অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করার কথা বলে তার কাছে বেশ কিছুদিন রাখেন। এ সময় মাদারীপুর শহরের একটি বাড়ির জমি স্বপন লিখে নিয়েছেন যা তার মায়ের নামে ছিল। এ ছাড়াও তার বড় সন্তান সৈয়দ জানে আলম তার জমি বিক্রির ব্যাংকে থাকা অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, সম্পত্তি ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নিওয়ার পরে তিনদিন খাবার না দিয়ে বড় সন্তান ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, একাধিকবার তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় মাদারীপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন বৃদ্ধা। মামলার অভিযোগ ছিল তার সাথে প্রতারণা করে সম্পত্তি ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার। মামলায় আসামি করা হয়েছে বড় সন্তান সৈয়দ জানে আলম স্বপন ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার রুমা এবং তার নাতনী সৈয়দ রাহুল আলম শুভকে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দা শান্তি নাহার নামে ওই বৃদ্ধার স্বামী বছর তিনেক আগে মারা যায়। ওয়ারিশ হিসেবে রেখে যায়, তিন সন্তান এক মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পরে চিকিৎসাজনিত কারণে মাদারীপুর শহরে বৃদ্ধা তার বড় ছেলের বাড়িতে থাকেন। নগদ টাকার প্রয়োজন থাকায় ৫২ লক্ষ টাকার জমি বিক্রি করেন। সেই টাকা বড় সন্তানের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। কিছুদিন পরে সে অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসার কথা বলে তার বড় সন্তান স্বপন ও তার স্ত্রী রুমা এবং তার সন্তান শুভ অজ্ঞাত একটি বিল্ডিং ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হবে জানিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ পত্র সই করিয়ে নেয়। এর কিছুদিন পরে সে জানতে পারেন তার বাড়ির তিন শতাংশ জমি হেবা দলিলের মাধ্যমে বড় সন্তান জানে আলম তার নামে লিখে নিয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের তার একাধিক সম্পত্তি প্রতারণা করে অন্যদের নামে দলিল করিয়ে দেন। বিষয়টি জানার পরে তার বড় ছেলের কাছে জমি বিক্রির টাকাসহ মোট ৭১ লক্ষ টাকা এবং তিন শতাংশ জমি ফেরত চাইলে তিনি টাকা ও জমি ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। পরে মামলা করা হুমকি দিলে এ সময়ে সৈয়দ জানে আলম স্বপন বৃদ্ধা শান্তি নাহারকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি ও লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়। ঘটনার পরে তার মেজ ছেলে সৈয়দ মুক্তি তার মাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করেন।
ভুক্তভোগী সৈয়দা শান্তি নাহার বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে আমার ছেলে সৈয়দ জানে আলম ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার রুমা জায়গাজমি অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, পরে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমার দরকার নেই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার এখন সরকারের কাছে চাই।
নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধার দেবর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলমগীরর জানান, আমার ভাতিজা স্বপন আমার সামনে ওর মাকে মারধর করেন। এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমি জীবনে দেখিনি। এখন ওর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়ার উচিত। আর যাতে কেউ মায়ের গায়ে হাত তুলতে না পারে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ জানে আলম স্বপন বলেন, এ ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানানো বানোয়াট। আমার মা মিথ্যা কথা বলছে। জমি বিক্রি করে তার কাছে টাকা তাকে দেওয়া হয়েছে। সে তার টাকা তুলে সে চিকিৎসার জন্য খরচ করেন। তার জমির বিক্রির বাকী টাকা তার একাউন্টেই রয়েছে।
ডাসার থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা মাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।
এ ব্যপারে ডাসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ আফরোজ বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মাকে তার সন্তান মারধর করবে এটা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়ার মত নয়। অভিযুক্ত সেই সন্তানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ দেয়া হবে।