ক্রিকেট

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজও হারল বাংলাদেশ

বলটা উইকেটকিপারের হাতে পোঁছেছে কি পোঁছায়নি, আলি খান সেটার অপেক্ষায় থাকলে তো? আম্পায়ারের আঙুলও তখনো ওঠেনি। কিন্তু আলি খান ছুটলেন, ছুটতে ছুটতেই বল উইকেটকিপারের গ্লাভসবন্দি ও আম্পায়ারের আউটের ইশারা দেখলেন। ততক্ষনে সতীর্থদের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নের নায়ক। নায়কই তো।

এমন কিছু কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন মার্কিনিরা? টেস্ট খেলুড়ে দেশ বাংলাদেশের বিপক্ষে কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে প্রথমবার খেলতে নেমেই সিরিজ জয়। আলি খানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যেই অমন অসাধ্য সাধন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন আউট হয়ে ফিরছেন, তখনো হাতে পাঁচ উইকেট বাংলাদেশের। সিরিজে ফিরতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩৯ রান। বল বাকি ৩২টি। কিন্তু আলি খানের বোলিং ধ্বংসেজঙ্গে সব ধসে যায় বাংলাদেশের লোয়ার মিডলঅর্ডার ও লোয়ার অর্ডার। সফরকারীরা ৩২ রানে শেষ পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ম্যাচ হারে ছয় রানে। সঙ্গে সিরিজও।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে আয়োজন করা হয়েছিল এই সিরিজের। অথচ সেই সিরিজই কি না বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে লজ্জার সামনে। যেটা সহজে ভুলে পারতে পারার কথা নয় নাজমুল হোসেন শান্তদের। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশ দলের দুশ্চিন্তার প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল টপ অর্ডার। গতরাতে যেন পুরো ব্যাটিং অর্ডারই ধসে পড়ল।

ম্যাচটা বাংলাদেশ শুরুই করেছিল একরাশ চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে। টপ অর্ডার রানের জন্য সংগ্রাম করছে। সবচেয়ে বড় কথা অধিনায়কের নিজের ব্যাটই কথা বলছে না। মড়ার ওপর খাড়ার গা হয়ে আসে, প্রথম ম্যাচে হার। ম্যাচের শুরু থেকেই তাই কিছুটা ‘রক্ষণাত্মক মুড়ে’ বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ফিল্ডিং বেছে নেওয়ার পর ব্যাপারটা পরিস্কার হয়। ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাসহীনতাই যার বড় কারণ। আগে ব্যাটিং করে তাই ঝুঁকি নিতে চায়নি বাংলাদেশ। সফরকারীরা বরং লক্ষ্য দেখে তাড়া করার নীতিতেই হাঁটে।

তাতেও ব্যাটিং অর্ডারকে বাঁচানো গেল কই? যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ উইকেট হারায় প্রথম ওভারে। মুখোমুখি প্রথম বলেই বোলার সৌরভ নেত্রবালকারের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সৌম্য সরকার ফেরেন শূন্য রানে। ওপেনিং থেকে লিটন দাসকে আরও একবার ‘ছুটি দেওয়ায়’ এদিন সৌম্যর সঙ্গী হন তানজিদ হাসান তামিম। সম্ভাবনাময়ী ইনিংসের পূর্ণতা দিতে পারেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। ১৫ বলে তাঁর ১৯ রানের ইনিংস থামে পেসার জেসি সিংয়ের বলে বোল্ড হয়ে।

এরপর নাজমুলের সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়ের ৪৮ রানের জুটি ভাঙে দুজনের ভুল বুঝাবুঝিতে। নাজমুল রানআউট হন ৩৬ রান করে। দ্রুতই ড্রেসিরুমের পথ ধরেন তাওহিদ (২৫) ও মাহমুদ (৩)। একপ্রান্তে পালটা আক্রমণে সাকিব আল হাসান চাপ সরাতে সরাতেই আউট হন জাকের আলি অনিক (৪)। এরপর আলি খানের সেই ওভার। প্রথমে সাকিব আল হাসান (৩০) ও পরে তানজিম হাসান সাকিবকে (০) আউট করে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের সম্ভাবনা জোরালো করে তোলেন। মাঝে শরিফুল ইসলাম শিকারে পরিণত করেন নেত্রবালকার। আর শেষটা আলি খানের হাত ধরে। অথচ মোনাঙ্ক প্যাটেলের ৪২ ও অ্যারন জোন্সের ৩৫ রানের ইনিংসের পরও রিশাদ-শরিফুলদের হিসেবি বোলিং যুক্তরাষ্ট্রকে দেড়শ রানের আগেই আটকে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের কাছে সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল পাহাড়সম।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker