জাতীয়টাঙ্গাইল

এবার ঢাকায় কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ বড় মনিরের বিরুদ্ধ

টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকায় এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। 

শুক্রবার রাতে জরুরি সেবার ‘৯৯৯’ নম্বর থেকে কল পেয়ে পুলিশ রাজধানীর তুরাগ থানার এলাকার প্রিয়াংকা সিটি আবাসিক এলাকায় বড় মনিরের ফ্ল্যাট থেকে ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করে। তাকে অস্ত্রের মুখে ওই বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তবে বড় মনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এখনও পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো: শাহজাহান জানান, টাঙ্গাইলের গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে তদন্ত চলছে।

এদিকে ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে গাড়িতে করে ওই বাড়িতে নিয়ে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় তার মেয়েকে। এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেছেন তিনি। 

বড় মনির জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। আগের একটি ধর্ষণের মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বড় মনির। 

এক কিশোরীর করা ধর্ষণের মামলায় গত বছর গ্রেফতার হয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি। গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় ওই কিশোরীর করা মামলায় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।

টাঙ্গাইলের ওই মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে মামলার বাদী কিশোরী বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন। 

কিশোরীর অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ করেন বড় মনির। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন। 

প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনি পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোরী। 

মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। 

তাতে রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। তার স্ত্রী নিগার আফতাবও সেখানে ওই কিশোরীকে ‘মারপিট’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

পরে মেয়েটির একটি সন্তান হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো: মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনির। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

পরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য যান বড় মনির। তখন আদালত বড় মনির ও সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে।

গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা বড় ম‌নি‌র নন।

নবজাতকের ডিএনএর সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি বলে পিবিআইর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পক্ষে থাকায় গত বছরের ৯ অক্টোবর বড় মনিরকে জামিন দেয় আপিল বিভাগ।

অন্যদিকে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker