জামালপুর

মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন, ভালো দামেই বিক্রয় করতে চান কৃষক

স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:

মিষ্টি আলু একটি অবহেলিত ফসল হলেও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রতি বছরই চাষ হচ্ছে মিষ্টি আলুর। অন্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এব ছর মিষ্টি আলুর ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দামেই এইসব মিষ্টি আলু বাজারে বিক্রয় করতে চান কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছরের মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ৭১০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫০ হেক্টর বেশি হয়েছে। এছাড়াও বারী-৮ জাতের মিষ্টি আলুর পাশাপাশি ‘মুরাসাকি’ জাতের মিষ্টি আলু চাষ বেশি হয়েছে।

উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের বড়বাড়ীয়া, কৈজুরী, ধারাবর্ষা, জাফরাবাদ, কান্দারপাড়া, সৈয়দপুর, বয়সিংহ ও ভাটারা ইউনিয়নের ভাটারা, মোহনগঞ্জ, কাশারীপাড়া, পাখাডুবী, ফুলবাড়িয়া, পারপাড়া, গোপীনাথপুর, কৃষ্ণপুর, চর হরিপুর সহ কলাছড়া এলাকায় এই আলু চাষ হয়েছে। 

উপজেলার কামরাবাদ ও ভাটারা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মিষ্টি আলু সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে ফসলের মাঠ। পুরুষেরা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগলা করছে আর নারী ও শিশুরা আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তুপ করছে। দিনের শেষান্তে মিষ্টি আলু ক্ষেতে বসেই মেপে বস্তাবন্দি করছে কৃষকরা। কেউ আবার আলুর লতা গবাদি পশুর জন্য যত্ন করে ঘোড়ার গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ী। সব মিলিয়ে কৃষকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপন শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং উপশী জাতের মিষ্টি আলু ৯০ দিনেই তোলা যায়। এবার আলু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।

ধারাবর্ষা গ্রামের আলু চাষী মাহাবুব মিয়া, সুজা মিয়া, সাইফুল, হেলাল মিয়া বলেন, ‘ফলনতো মাশআল্লা ভালো হয়েছে। তবে বাজারে ভালো মুল্য পাবো কিনা এই নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। অনেকেই আবার মাঠ থেকেই আলু বিক্রয় করে দিচ্ছেন। খরচের তুলনায় লাভ ভালোই পাচ্ছে অনেকে। 

একই এলাকার চাষী সোনাহার জানান, তিনি এ মৌসুমে ৫২ শতাংশের ১বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন। প্রতি শতাংশে দুই মণের বেশি মিষ্টি আলুর ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু পেয়েছি একশো মণের উপরে। প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি বিক্রি করছি ১০০০ টাকা দরে। ১বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি ১ লাখ ২ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয় ৭৭ হাজার টাকা। যা কিনা অন্য কোন ফসল করে এতো লাভ করা সম্ভব না। 

স্থানীয় এক মিষ্টি আলুর বেপারী সাইফুল্লাহ ইসলাম জানান, মিষ্টি আলুর চাহিদা ঢাকাতে অনেক বেশি। কারণ এই মিষ্টি আলু বেলে দোআঁশ মাটিতে হওয়ায় খুবই মিষ্টি হয়। তাই এলাকা থেকে ১ হাজার হতে ১১০০ টাকা মণ কিনে ঢাকায় ১৬০০ হতে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। এসব মিষ্টি আলু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার আলুর দাম একটু বেশি। তবুও এই মিষ্টি আলুর চাহিদা ব্যাপক। 

এ-বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘এ-বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরাও অনেক খুশি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। তাই কৃষকরা আলু তুলে বোরো চাষের প্রস্তুত হচ্ছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker