জামালপুর

খসড়া কাগজে হাজিরা, খাতা তালাবদ্ধ করে প্রধান শিক্ষক বিনা ছুটিতে

স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:

জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে শিক্ষক হাজিরা খাতা তালাবদ্ধ রেখে প্রধান শিক্ষক বিনা ছুটিতে দীর্ঘ ১মাস যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাজিরাখাতা না পেয়ে ‘খসড়া কাগজে’ সহকারি শিক্ষকরা হাজিরা সাক্ষর দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। 

গত রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায় এমন ঘটনা। এ-ঘটনায় শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি এবং স্থানীয়দের মাঝে সমালোচনা সহ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছেন। 

বিদ্যালয় ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গুলজার হোসেন গত ডিসেম্বর মাসে স্কুল বন্ধ থাকা কালীন সময়ে নিজের শারীরিক চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। যাওয়ার পূর্বে তিনি দুই সপ্তাহের ছুটি চেয়ে একটি লিখিত পত্র ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে দাখিল করেন। এদিকে নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠান খোলা হলে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক গোলজার হোসেনের উপস্থিতি নেই। সেই সাথে সকল শিক্ষকদের হাজিরা খাতাসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তার আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে যান। ডিসেম্বর থেকে প্রায় ১মাস যাবত প্রতিষ্ঠান থেকে ধরাছোঁয়া বাহিরে অবস্থান করছেন প্রধান শিক্ষক। গত ২মাস পূর্বে ঐ প্রতিষ্ঠানে গোপনে ৫টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানা যায়। এদিকে বিদ্যালয়টি খোলার পর কে বা কিভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন, সেই দায়িত্বে কেউ না থাকায় এলোমেলো হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা। 

এ-ব্যাপারে সহকারী সিনিয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনার প্রধান শিক্ষক গোলজার হোসেন কাউকে কোন লিখিত দায়িত্ব দিয়ে যাননি। তিনি মুঠোফোনে আমাকে বলেন চিকিৎসার জন্য তিনি ইন্ডিয়া যাচ্ছেন, সবাই মিলে যেন প্রতিষ্ঠান চালাই।

শরীরচর্চা শিক্ষক অমর আলী বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাত্র। আমাদের পাঠদানের বাইরে কোন কিছুই তিনি পছন্দ করেন না। প্রধান শিক্ষক যেভাবে আমাদের দিকনির্দেশনা দেন, আমরা সেই ভাবেই বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করি। নিয়োগের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।

ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক কবে কার থেকে ছুটি নিয়েছেন আমরা জানি না। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরা খাতা নেই। খসড়া কাগজে সাক্ষর দিচ্ছি আমরা। কিছু দিন পূর্বে বিদ্যালয়ে বেশ কিছু নিয়োগ হয়েছে শুনেছি। তবে কবে কখন এসব নিয়োগ দিয়েছে সেটা আমরা সঠিক জানি না।

সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল বারেক সহ স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বনামধন্য একটি বিদ্যালয়ের কে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে এই প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি সহ নানা অনিয়মের সাথে প্রধান শিক্ষক গুলজার হোসেন জড়িত রয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

এ-ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম মানিক মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক গোলজার হোসেন দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়েছেন। সেই সময় চলে গেছে। তবুও সে কেন তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেনি এ ব্যাপারে তাকে শোকজ করা হবে।

এ-বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, চিকিৎসার জন্য প্রধান শিক্ষক ছুটি নিতেই পারে। তবে অন্য কাউকে দায়িত্বটা দিয়ে তারপর ছুটি নিতে হবে। তা না হলে বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যাহত হবে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker