জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা : আসামি মুক্তির জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

এক দশক আগে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তির জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রবিবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী ও মো. মজিবুর রহমান মুজিব।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক বলেন, গত ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট এই আসামিকে জামিন দিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়মিত জামিন প্রশ্নে রুল জারি করা হয়েছিল। জামিন প্রাপ্তির পর তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নজরে আসে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে জামিন বাতিলের আদেশ দেন।

এ আইন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলাটির বিচারকাজ কোনো রকম ব্যর্থতা ছাড়া ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগে এ আসামির নিয়মিত জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর গত ২০ নভেম্বর দেওয়া জামিনের পক্ষে দাঁড়ানো দুই আইনজীবীকে তথ্য গোপনের কারণে সতর্ক করা হয়েছে।

সাহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই এবং টঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলীর নামের দুইজনকে ২০১৪ সালের অগাস্ট গ্রেপ্তার করে। ওই দুই আসামির জবানবন্দিতে এ হত্যায় তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অন্য তিন ভাই- টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালিন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তার পর পরই আমানুর ও সহিদুরসহ চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান।
এরপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২২ মাস পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসর্মপণ করেন। প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।

এদিকে ছয় বছর আত্মগোপনে থাকার ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সকালে সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন আদালত মুক্তিকে জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে আবেদন করেও জামিন পেতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় একটি জামিন আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত জুনে আরেকটি জামিন আবেদন করেন মুক্তি। নতুন জামিন আবেদনের শুনানিতে পুরুনো জামিন আবেদনের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ তুলে ধরলে গত ১৯ জুলাই নতুন জামিন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তথ্য গোপন করার জন্যে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন মুক্তি। শুনানির পর চেম্বার আদালত জরিমানা স্থগিত করে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দেন। সেই সঙ্গে কোনো রকম ব্যর্থতা ছাড়া মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের এ আদেশ গোপন করে ফের জামিন আবেদন করে জামিন নিয়েছিলেন সাহিদুর রহমান খান মুক্তি। ধরা পড়ার পর যা বাতিল করলেন হাইকোর্ট। মামলাটি এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর‌্যায়ে আছে। মোট ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যের পর জেরাও শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker