ক্রিকেট

ভারতকে হারিয়ে সম্পন্ন হলো অস্ট্রেলিয়ার মিশন হেক্সা

এটা বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না, যে দাপট দেখিয়ে ভারত ফাইনালে উঠেছিল, তার অর্ধেকও দেখিয়ে আসতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। আপনি যদি ভারতের টানা ১০ জয়ের দিকে দেখেন। কিংবা দুই দলের ব্যাটিং ও বোলিং লাইনআপের পার্থক্য করেন। ভারতকে নিরঙ্কুশ ফেভারিট বলা ছাড়া উপায় নেই।

এর ওপর ঘরের মাঠ, ১১ ক্রিকেটারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক। কিছুতেই যেন কিছু এলো-গেলো না অস্ট্রেলিয়ার। বড় মঞ্চের গন্ধ পেয়ে যেন অস্ট্রেলিয়ানদের শারীরিক চলন-বলন বদলে গেল। ফিল্ডিংয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতা, বোলিংয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি ভারতীয় ব্যাটারদের। তার ফলটা তো চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে।

ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার স্পর্শ পেল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ সালে শেষবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল অজিরা। মাঝে ২০১৯ বিশ্বকাপে খালি হাতে ফিরেছিল।

কিন্তু এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে যে অজিদের সম্পর্কটা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে মধুর, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন প্যাট কামিন্সরা।

ভারতের জন্য এই ফাইনালটা ছিল, ২০০৩ বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ। এর সঙ্গে যোগ করতে পারেন, সময়ের সেরা দুই ব্যাটার বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার শেষ বিশ্বকাপটা রাঙানো! কিন্তু সেই মঞ্চ আপন আলোয় রাঙালেন ট্রাভিস হেড। অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরিতে আরেকবার ভারতের দুঃস্বপ্ন হয়েছেন এই ওপেনার। গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই।

প্রথম ইনিংসে ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরি করেছিলেন। আজ ভারতকে পেয়ে আরেকবার সেই রূপ ধারণ করেন হেড। ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ড্রেসিরুমে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ ও স্টিভ স্মিথ। ভারত ত্তখন উড়ছিল। বোলারদের সাজিয়ে দেওয়া মঞ্চ তছনছ হওয়ার চাপ অস্ট্রেলিয়ানদের মনে ভর করা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু অন্যকিছু ভাবছিলেন হেড ও মারনাশ লাবুশেন। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ১৩২ রানের জুটি। বিশ্বকাপ শিরোপা থেকে দুইরান দূরে থাকতে ১৩৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ফেরেন হেড।

হেডের সঙ্গী লাবুশেন অপরাজিত ছিলেন ৫৮ রানে। শেষ দুইরানের সমীকরণ মেলান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এদিন ভারতের শুরুটা হয়েছিল টস হেরে। আহমেদাবাদে শেষ চার ম্যাচের তিনটিতে রান তাড়া করে জয় দেখা গেছে। ফাইনালের মতো স্নায়ু চাপের মঞ্চেও তাই ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে দুইবার ভাবেননি কামিন্স।

কামিন্স নিজে তো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেনই, এগিয়ে এসেছেন মিচেল স্টার্ক-জাম্পারাও। ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মার সঙ্গে শুবমান গিলের জুটি ৩০ রানের। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে কোহলিকে নিয়ে ইনিংসের গতি হারাতে দেননি রোহিত। আরেকটি ঝোড়ো ইনিংসে অজি বোলারদের দিশাহারাই করছিলেন। কিন্তু আরেকবার তাঁর ইনিংস পূর্ণতা পাওয়ার আগে থেমেছে।

ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে রোহিত ফেরেন ৪৭ রানে। আগের দুই বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ছক্কা আর চার মেরেছিলেন। আউট হওয়া বলেও উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিংটা পাননি। তিন বল পরই অধিনায়কের পথ অনুসরণ করেছেন শ্রেয়াস আইয়ার।

এরপর কোহলি-রাহুলের জুটি। কোহলির ফিফটির পর এ জুটি ভাঙে। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে আউট হয়েছেন কোহলি। কোহলির ৬৩ বলের ইনিংসটি সাজানো চারটি চারে। রাহুলের সঙ্গে এরপর জুটি বাঁধেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে ২২ বল স্থায়ী ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন জাদেজা। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন জশ হ্যাজেলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।

তার পর‍ও রাহুল শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে ভারতের ইনিংস শেষের গল্পটা একটু ভিন্ন হলেও হতে পারত। সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে ২৫ রানের জুটিতে সে স্বপ্নটাই দেখাচ্ছিলেন রাহুল। কিন্তু তিনিও আউট হয়েছেন ৬৬ রানে। তাঁর ১০৭ বলের ইনিংসে মাত্র একটি চার। এরপর লেজের ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল চলেছে। ৫০তম ওভারের শেষ বলে কুলদীপ যাদব আউট হলে ভারতের ইনিংস শেষ হয়। ইনিংসের শুরুতে লক্ষ্যটা অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য পাহাড়সম বানিয়ে ফেললেও শেষ পর্যন্ত সেটা ধরে রাখতে পারেননি মোহাম্মদ সামি-জসপ্রিত বুমরারা। ৭ উইকেটের জয়ে অজিরা পেয়ে যায় ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার দেখা।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker