বাণিজ্য

জরুরি ঋণ দিয়ে বন্ধু বাড়াচ্ছে চীন

চীনের কাছ থেকে কমপক্ষে ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। গত দুই দশক ধরে দেওয়া এই ঋণের অর্ধেকের বেশি এখনো পাওনা। কারণ ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। তবে এ সংকট কাটাতেও চীনের তৎপরতা রয়েছে।

দেশটি অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঋণ বেশি দিচ্ছে জরুরি সহায়তা হিসেবে। এতে সংকটে থাকা দেশগুলোর পুনরুদ্ধারে সহায়ক হচ্ছে। এতে চীন আন্তর্জাতিক উদ্ধারক হিসেবেও আবির্ভূত হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে বাড়ছে দেশটির মিত্র।

ভারজিনিয়ার উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডাটার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, চীনের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ সংকটে থাকা বিভিন্ন দেশ পেয়েছে। দেশটি ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ ঋণ দিয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআইয়ের আওতায় চীনের পাওনার পরিমাণ এখন এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, যা দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণ সংগ্রাহকে পরিণত করেছে।

চীন বলেছে, ১৫০টির বেশি দেশ বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সেতু, বন্দর, মহাসড়কসহ নানান অবকাঠামো তৈরিতে ঋণ দিয়েছে। ১৬৫টির বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজার প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের খবর পেয়েছে এইডডাটা। 

তারা বলেছে, ২০১৬ সালে প্রায় ১৩৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল চীন। আর ২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বিভিন্ন দেশকে ঋণ ও সহায়তা হিসেবে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ সহায়তা দেওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের মিত্র হয়ে উঠেছে। তবে একই সময় পশ্চিমা বিশ্বসহ শ্রীলঙ্কা, জাম্বিয়ার মতো ঋণগ্রহীতা কিছু দেশ সমালোচনাও করেছে। তাদের দাবি, চীনের অর্থায়ন বিভিন্ন দেশের ওপর এমন ঋণের বোঝা চাপিয়েছে, যা তারা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।

এইডডাটার গবেষকরা বলছেন, চীনের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত, এমনকি বাতিল হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। সে কারণে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বেইজিং চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। তাই ঝুঁকি কমাতে চীনের নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে একটি, অবকাঠামো খাতে দেওয়া ঋণের পরিমাণ কমিয়ে জরুরি সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো। সে কারণে ২০১৫ সালে মোট ঋণের ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো খাতে দেওয়া হলেও ২০২১ সালে সেটি ৩০ শতাংশে নেমে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোকে ২০২১ সালে চীন যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার ৫৮ শতাংশ ছিল জরুরি সহায়তা। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক দুর্দশায় থাকা দেশগুলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে টিকে থাকতে পারছে এবং ঋণমানও ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে। এতে তারা বৈশ্বিক অন্য ঋণদাতাদের পাওনাও পরিশোধ করতে পেরেছে সময়মতো। এর অর্থ দাঁড়ায়, চীন ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এইডডাটা বলেছে, এর ফলে সংকটে থাকা দেশগুলোর ঝুঁকিমুক্ত হতে চীনা ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।

গত অক্টোবরে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের (বিআরআই) দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে চীন। এতে নতুন করে আরো ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।

তখন চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অবকাঠামো খাতে তারা বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করেছে। প্রস্তাবকরা বলছেন, এর ফলে বিশ্বের সম্পদ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দক্ষিণে চলে আসবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker