লালমনিরহাট

ভগবান তাদের বিচার করো” জীবনের শেষ ইচ্ছে পুরন হলো না বৃদ্ধ অনিলের

লালমনিরহাট প্রতিনিধ:
জীবনের শেষ ইচ্ছে পুরন করতে ১৫ দিন ধরে ঘুরেও আশ্রমে ৫৪ জমি দিতে পারলেন না বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত(৮৫)। লিখে প্রস্তুত করা দলিল সম্পাদন মুহুর্তে  সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধ।

মঙ্গলবার(১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলেও দলিল সম্পাদন করেননি সাব রেজিস্টার।

বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বৈরাগী ভিটার এলাকার মৃত খগেন্দ্র নাথ মহন্তের ছেলে।

জানা গেছে, পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া কয়েক একর জমির মালিক অনিল চন্দ্র মহন্ত বৈরাগী নাম অনুসারে ওই এলাকাটির নাম করন হয় বৈরাগির ভিটা। যৌবনে জমিগুলো আগলে রাখলেও বাধক্যে এসে সন্তানরা বিক্রি করে নষ্ট করেন। এতে অনেকটাই অসন্তোষ বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র। বৃদ্ধ অনিলের দুই স্ত্রীর সংসার। দুই সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে। বর্তমানে ছেলের ঘরেই নাতি নাতনি রয়েছে অনিলের।

ইতিপুর্বে সন্তানদের নামে বেশ কিছু জমি লিখে দিয়েছেন অনিল চন্দ্র মহন্ত। ছোট ছেলে রণজিৎ মহন্ত জমি বাড়ালেও বিপৎগামি বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত সর্বস্য বিক্রি করেছেন। এদিকে জীবনের শেষ ইচ্ছে আশ্রমে জমি দান করবেন অনিল চন্দ্র মহন্ত। শেষ ইচ্ছে পুরন করতে ছেলেদের নির্দেশও দেন তিনি।

কিন্তু বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত বেকে বসেন। দাবি করেন, আশ্রমে দান করলে বাকী জমি যেন ছেলেদের দান করেন। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ অনিল রাজি হন। তবে ছেলেরা তার সম্পত্তি নষ্ট করবে ভেবে নাতিদের নামে সমহারে দলিল করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন তিনি।

সেই ইচ্ছে পুরন করতে গত ১৫ দিন ধরে বয়সের ভারে নাজুক অনিল চন্দ্র মহন্ত ছুটছেন আদিতমারী সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে বড় ছেলে অতুল চন্দ্র মহন্ত একটি চক্রকে লেলিয়ে দিয়ে দলিল করতে বাঁধা দেন। প্রাণ ভয়ে একাধিক দিন অফিস ত্যাগ করেন বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত।

সর্বশেষ মঙ্গলবার(১২ সেপ্টেম্বর) অনিল চন্দ্র মহন্তের ৪টি দলিল সম্পাদন করার আশ্বাস দেন সাব রেজিস্টার (ভার) রশিদুজ্জামান। সেই আশ্বাসে দলিল লিখে  নিয়ে সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ে যাওয়া মাত্রই সাব রেজিস্টারের সামনে থেকে দলিল ৪টি ছিনিয়ে নেন ওই চক্রটি। তৈরী হয় হট্টগোল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশী সহায়তা নেন সাব রেজিস্টার। তবে দলিল ৪টি এখন পর্যন্ত সম্পাদন হয়নি। বৃদ্ধ অনিলকে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত থানায় বসে রেখে সন্ধ্যায় বাড়ি পাঠানো হয়। অপর দিকে দলিল লেখক রুহুল আমিন ও অনিল চন্দ্র মহন্তের ছোট ছেলে রণজিৎ আর নাতিদের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বড় ছেলে অতুল চন্দ্রের স্ত্রী চন্দনা মহন্ত।

বৃদ্ধ অনিল চন্দ্র মহন্ত বলেন, দলিল পার করে দিতে চেয়ে আমাকে থানায় এনে বসে রাখা হয়েছে। অফিসের সময় শেষ হলে বাড়ি পাঠায়ে দেয়। দলিল না দিলেও আমি মারা গেলে ছেলে বা নাতিরা জমি পাবে। কিন্তু পাবে না আশ্রম। যা আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল। কখন যে মরে যাই। সরকারী লোকরাই আমাকে জমির দলিল দিতে দিলো না। ভগবান তাদের বিচার করবে।

আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্টার(ভার) রশিদুজ্জামান বলেন, ছেলের অভিযোগের পারিবারিক সমাধান করতে প্রথম দিন বৃদ্ধ অনিলকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দিন দলিলটি আমার হাতে আসার আগেই একটি পক্ষ ছিনিয়ে নেয়ায় হট্টগোল তৈরী হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে বৃদ্ধ অনিলের দলিল ৪টি সম্পাদন করা হয়নি। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। দাতা যাকে ইচ্ছে দান করতে পারেন, এতে বাঁধা দেয়া অপরাধ।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বা আইন শৃঙ্খলার অবনতির কোন শ্বঙ্কা ছিল না এবং নেই। সাব রেজিস্টার চাইলে পুলিশী নিরাপত্তায় দাতাকে অফিসে পৌছে দিতে পারতেন।

লালমনিরহাট জেলা রেজিস্টার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, দাতা যাকে ইচ্ছে জমি দিতে পারেন। কাগজ সঠিক হলে অবশ্যই দলিল সম্পাদন হবে। পরিস্থিতি উত্তাপ্ত থাকায় দলিলটি সম্পাদন করেনি বলে শুনেছি। তবে দলিলটি পরে সম্পাদন করতে বলেছি। কেন করেনি, তা খতিয়ে দেখা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker