দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। সরকারের উন্নয়নের ছোয়ায় এখন স্বস্তির মহাসড়ক এটি। অথচ মহাসড়কের ওপর হাটবাজার ও ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট, থ্রি-হুইলার উচ্ছেদ না করা হলে এবার ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দুর্ভোগ লাঘবে অবৈধ হাট-বাজার দোকানপাট, থ্রি-হুইলার, বিভিন্ন যানের ষ্টেশন উচ্ছেদ করে মহাসড়কটি দখল মুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি। এক সময়ের যানজট আর দুর্ভোগের মহাসড়ক ছিল এটি। এ মহাসড়কের কালিয়াকৈর অংশে সবচেয়ে বেশি ঈদ, পূজাসহ জাতীয় বিভিন্ন দিবসের ছুটিতে যানজটে নাকাল অবস্থা ছিল। বিপুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলেও ফলাফল ছিল প্রায় শূণ্যেও কোঠায়। দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই উত্তরবঙ্গের প্রায় ২২ জেলার যানবাহন এ পথেই রাজধানীতে চলাচল করে আসছিল। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের জোয়ারে এ মহাসড়কের উন্নতিকরণ করা হয়েছে। ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের দু’পাশে সার্ভিস রোডসহ ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। ফলে গত ২/৩ বছর ধরে এ মহাসড়কে স্বস্তিতে যাতায়াত করে আসছে ঘরমুখো মানুষ।
এ মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়কে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হলেও প্রতি রোববার সেখানে হাট বসে। এছাড়াও উপজেলার মৌচাক, সফিপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড়, বোর্ডঘর ও চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় মহাসড়কের ওপরে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ হাট-বাজার। বিভিন্ন স্থানে দুপাশে ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজের দুপাশ দখল করে বসছে দোকানপাট। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, সিএনজি, মাহিন্দ্রসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহনের ষ্টেশনও মহাসড়কের ওপরেই। এসব থেকে প্রতিনিয়ত ও মাসিক চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশসহ সরকার দলীয় অংগসংগঠনের কিছু নেতাকর্মীরা।
চাঁদা দিয়ে দাপটের সঙ্গে হাটবাজার ও দোকানপাট করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও ওই সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কেনেন পণ্য। মাসোয়ারা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ থ্রি- হুইলারও। অপরদিকে একাধিক স্থানে সার্ভিস রোডের ওপর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারখানার মালবাহী কভার্ডভ্যান ও বালু রেখে দেদারচ্ছে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী চক্র। এসবের কারণে মহাসড়কটি সংকুচিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে জটলা সৃষ্টি হচ্ছে, ঘটছে প্রায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও।
আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। এখনো মহাসড়কের এসব নানামুখি সমস্যার সমাধান করা হয়নি। এসব হাটবাজার, দোকানপাট, থ্রি-হুলাইর, যানবাহন ষ্টেশন, বালু উচ্ছেদ করা না হলে এবার ঈদ যাত্রায় স্বস্তির মহাসড়কটি অস্বস্তিতে পরিণত হবে। এছাড়াও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, এলোমেলো যাত্রী উঠানামা, মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা আবর্জনার স্তুপের কারণে অনেকটাই বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন।
এসব সমস্যাগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে সমাধান না হলে এবার ঈদে দূর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে ও নানামুখি সমস্যার কারণে এ মহাসড়কে দুর্ভোগ বাড়বে বলেও জানান স্থানীয়রা। তবে দুর্ভোগ লাঘবে এসব নানামুখি সমস্যা উচ্ছেদ করে মহাসড়কটি দখল মুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
মহাসড়কে এসব নানামুখি সমস্যা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি আজ কালের মধ্যেই উচ্ছেদের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস পরিশ্রমে গত ঈদের মতো এবার ঈদেও নির্বিঘ্নে ও স্বস্তিতে ফিরবে ঘরমুখো মানুষ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, মহাসড়কের এসব সমস্যার বিষয়গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের পর আশা করছি এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা রাখি।