বাণিজ্য

ব্রয়লারের দাম কমলেও দেশি মুরগি চড়া, লেবুর হালি ৮০ টাকা

এক দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে, বেড়েছে দেশি মুরগির দাম। ব্রয়লার কোথাও কোথাও কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। কোথাও বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে। দেশি মুরগির দাম ৬১০ টাকা কেজি থেকে লাফ দিয়ে ৭০০ টাকায় উঠেছে।

ব্রয়লার মুরগি তিন দিন আগেও রাজধানীতে ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এই দামও আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটি বলছে, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে প্রান্তিক খামারিদের খরচ হয় ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। অন্যদিকে বড় চারটি কম্পানির খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ব্রয়লারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশি মুরগির দাম। ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়, যা গরুর মাংসের দামের কাছাকাছি।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। তবে দেশি জাতের মুরগি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা বেশি।

Image

কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো: হোসেন বলেন, ‘গতকাল ব্রয়লারের দাম ছিল ২৬০ টাকা, আজ ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। আমাদের কেনা দাম পড়েছে ২৩০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি ৭০০ টাকা কেজি। এটার দাম দু-তিন দিন আগে ছিল ৬০০ থেকে ৬১০ টাকা কেজি।’

আরেক মুরগি ব্যবসায়ী মো: ফয়েজ মিয়া জানান, তাঁর ব্রয়লার কিনতে প্রতি কেজিতে ২২৮ টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, ‘যারা পাইকারি বিক্রি করে, তাদের কাছ থেকে আমরা মুরগি নিই। এ জন্য আমাদের দাম একটু বেশি পড়ে। হোটেল বন্ধ থাকায় সামনে মুরগির দাম আরো কমবে। কারণ চাহিদা কমে গেছে।’

সুপার শপ মিনা বাজারের মগবাজার শাখায় গিয়ে দেখা যায়, চামড়া ছাড়ানো মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে, যা তিন দিন ধরেই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। তাদের মুরগির দাম কমানো হয়নি।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সরকারের তদারকি না থাকার কারণে দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে। এই খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদারের ভাষ্য, প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। অন্যদিকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করা হয়েছে। এতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেজি প্রতি ৬০ টাকার বেশি লাভ করেছে।

ব্রয়লার খাতের শীর্ষ চার প্রতিষ্ঠান হলো কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত পোলট্রি খাত নিয়ন্ত্রণ করে এসব কম্পানি। গতকাল এসব কম্পানি ব্রয়লার মুরগি খামার থেকে সর্বোচ্চ ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির ডিমের দাম প্রতি ডজনে পাঁচ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। আগে ছিল ১৩৫ টাকা ডজন। হাঁসের ডিমের দাম ১০ টাকা কমে এখন ১৮০ টাকা ডজন।

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো: মাসুম বলেন, ছোট লেবু ৪০ টাকা হালি, দেশি শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সবজি।

কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসা মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘টমেটো ৩০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা কেজি ছিল, আজ ৭০ টাকা নিল। বাজারে সবজির দাম একটু বাড়তির দিকে। আজ (গতকাল) প্রথম রোজার কারণে দাম বেশি। কয়েক দিন পর সবজির দাম কমতে পারে। না কমলে তো কেনা মুশকিল।’

রাজধানীর গুলশানের গুদারাঘাটের কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি শসা ৮০ টাকা কেজি, হাইব্রিড ৭০ টাকা। আরেক জাতের শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। সাদা ও কালো বেগুন ৮০ টাকা কেজি, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা। লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা, গোল লেবু ছোটটি হালি ৫০ টাকা, বড় লেবুর হালি ৮০ টাকা এবং ছোটটি ৬০ টাকা। ছোলা ৯০ টাকা কেজি, মুড়ি ৮০ টাকা এবং আদা ১৮০ টাকা কেজি।

একই বাজারে তেলাপিয়া ২০০ টাকা কেজি, বড় আকারের রুই ২৮০ টাকা কেজি, মাঝারি ২৬০ টাকা, ছোট ২৪০ টাকা। কাতল ২৫০ টাকা কেজি, পাঙ্গাশ ১৮০ টাকা, চিংড়ি ৫৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, আইড় ৭৫০ টাকা, গোলসা ৫৫০ টাকা, মাগুর ও শিং মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি টেংরা ৪৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ টাকা কেজি।

সবজির দাম বেশি থাকার কারণ হিসেবে গুদারাঘাটের সবজি ব্যবসায়ী খায়ের শেখ বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজি সরবরাহ কম হচ্ছে। এ জন্য দাম বেড়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker