
টাঙ্গাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণে ১৭৫৭ কোটি ৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
এর মধ্যে সড়ক পাকাকরণ ও নির্মাণ, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, পুকুর-খাল খনন, গ্রোথ সেণ্টর নির্মাণ এবং বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাবের উদ্ভব হয়। স্বভাবিকভাবে এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়ে। ফলে দেশীয় পণ্য বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো নির্মাণে অবশ্যম্ভাবী কাঁচামালের দামও বেড়ে যায়। বিশেষ করে বিটুমিন, ইট-পাথর, রড ও সিমেন্টের দামের ঊর্ধ্বমুখীতার প্রভাবে দরপত্রের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে থাকেন।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম স্থানীয় ঠিকাদার ও এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে চলমান কাজে গতি ফিরিয়ে আনেন।
টাঙ্গাইল এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত ১৭৫৭ কোটি ৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ৪৮১ কোটি ৫৯ লাখ ৯১ হাজার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ১২৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। জেলায় গত দুই বছরে এলজিইডির আওতায় ১০৮ কোটি ৩০ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২৩ দশমিক ৯২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ১৭০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭২ দশমিক ৮৩ কি:মি: সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৫২ কোটি ৪২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭৪৬ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ৪ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২৯৩ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট রক্ষাণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এক কোটি ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬টি পুকুর-খাল খনন করা হয়েছে। ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০টি গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ ও হাট-বাজার উন্নয়ন করা হয়েছে। ১১১ কোটি ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারিত দুইটি উপজেলা কমপ্লেক্স ও ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘাটাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১১ কোটি ৭৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ এবং ২ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬টি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সমুহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও দুইটি স্লুইজ গেট, ১৬টি পুকুর-খাল খনন, ৬টি গ্রোথ সেণ্টার নির্মাণ ও হাট-বাজার উন্নয়ন, একটি উপজেলা কমপ্লেক্স, ৮টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং ৯৭টি সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখিত ১৩১টি উন্নয়ন কাজ ৩৮ কোটি ৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া ১২৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮৮৯ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং ৫৭৪৪ দশমিক ৬৮ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম জানান, করোনা মহামারীর পর অনাকাঙ্খিত ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে বাজারে বিটুমিন, ইট-পাথর, রড ও সিমেণ্ট সহ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সড়ক নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয়ও বেড়েছে। তিনি ঠিকাদারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কখনও কখনও ব্যক্তি পর্যায়ে তাগিদ দিয়ে উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা নিরঙ্কুশভাবে সহায়তা করছেন।