নিখোঁজ হওয়ার ২৯ দিন পর মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে (৫২) জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে খুলনার দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফুল হায়দারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাঁকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে।
রহিমা বেগম যে বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন সেই বাড়ির তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনা পুলিশ থানা হেফাজতে নিয়েছে। তারা হলেন- বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও কুদ্দুস মোল্যার ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)।
তারা এখন খুলনা পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। কুদ্দুস মোল্যা বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুটমিলের একজন কর্মচারী।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমকে বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। খুলনা থেকে পুলিশের একটি দল এবং বোয়ালমারী থানা পুলিশ শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। তাকে রাতেই খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি পরিবারের কারো সহায়তায় বোয়ালমারীতে আত্মগোপনে ছিলেন বলে ধারণা করছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য খুলনা পুলিশ ভালো দিতে পারবেন বলে তিনি আরো জানান।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ না পেয়ে পরেরদিন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী খাতুন দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। সর্বশেষ পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছিল।
এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মরিয়ম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি মাত্র’। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোরগোল পড়ে যায়। শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর মৃতদেহের পোশাক দেখে তাকে নিজের মা দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। তবে পরদিন শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে মরিয়াম জানান, তার মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, খুলনার পুলিশ সুপার তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে নিখোঁজের ২৯ দিন পর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর থেকে মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৭ আগস্ট থেকে তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন।
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্যার ভাগিনা জয়নাল জানান, আমার মামা খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলে চাকরির সুবাদে খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকার নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আমি ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপর ওই ছবিটি রহিমা বেগমকে দেখিয়ে বলি যে, এটা আপনার ছবি কিনা; ওই সময় রহিমা বেগম হতভম্ব হয়ে বলেন, আমার ছবির মতোই তো লাগতেছে। তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করেন। রহিমা বেগমের বিষয়টি তাদেরকে বললে তারা ওই নম্বরের আর ফোন দিতে নিষেধ করে। তারপর থেকে আমার সন্দেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে তার (রহিমা) বিষয়টি শনিবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বরের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমই ওই নারী।
বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, খুলনা মহানগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পূর্বপরিচিত। রহিমা বেগমকে না জানিয়ে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু খুলে বললে তারা খুব দ্রুত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবেন বলে জানান। রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যান সে বিষয়ে আমাদেরকে নজর রাখতে বলেন কাউন্সিলর। তারপর শনিবার রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে কুদ্দুস মোল্যার বাড়ির তিনজন সদস্যকে খুলনা পুলিশ জবানবন্দি নেওয়ার জন্য নিয়ে গেছে বলে তিনি আরো জনান।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.