গাজীপুর

গাজীপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার পাঁচ আসামির

গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে শনিবার ভোররাতে নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

রোববার (৭ আগস্ট) বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান। এর আগে দুপুরে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

শনিবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয় ভুক্তভোগীকে। পরে রোববার দুপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় বলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎস এ এন এম আল মামুন জানিয়েছেন। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সানজিদা হক ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন বলে জানান ওই চিকিৎসক।

ডা. এ এন এম আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা জন্য ঢাকায় আলামত পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মাথার এক্সরে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আসামিরা হলেন, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাকিব মোল্লা (২৩), নেত্রকোনা সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়া (১৯) এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত নূর আলমের ছেলে সুমন হাসান (২২)।

এদিকে ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনই রোববার বিকেলে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে সজীব ও শাহীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের কাছে, রাকিব মোল্লাহ ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিনের কাছে এবং সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্নার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর ভুক্রভোগী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোসা. আরিফা বেগমের আদালতে (২২ ধারায়) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানো শেষে ওই নারী স্বামীর সাথে বাসে এসে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীকে নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওয়ে পৌঁছার আগে চালক ও হেলপার এবং অন্যরা মিলে ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন।

পরে বাসটি মাওনা হয়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকার দিকে রওনা হয়। পথে ওই নারীকে তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ধর্ষণের পর ভুক্তভোগীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজেন্দ্রপুরের কাছে নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ওই নারী হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানায়। পরে জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন আরও জানান, এ ঘটনার ৮ ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এবং লুণ্ঠিত সকল মালামাল ও তাকওয়া বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ৪ হাজার টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাল ২ কেজি, ১/২ কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাল, এটিএম কার্ড ১টি ও এক বয়াম আমের আচার। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনকে রোববার দুপুরে গাজীপুরের তিনটি ভিন্ন আদালতে তোলা হয়। পরে তারা সেখানে বিচারকদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker