নাটোর

ছিনতাইয়ের আসামিকে মাদক মামলায় জড়িয়ে তিন এসআই বিপাকে

নাটোরে ভ্যান ছিনতাইয়ের দুই আসামিকে ছিনতাইয়ের মামলা না দিয়ে মাদকের মামলায় আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) গুরুদাসপুর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুন্নাহার রীটার আদালতে হাজির পুলিশের উপ-পরিদর্শক আকরামুজ্জামান এবং মাহাবুর রহমান সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন।

এসময় আদালত অপর পুলিশ উপ-পরিদর্শক জাহিদ হোসেনের হাজির না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাবুর এবং আকরামুজ্জামান বলেন, জাহিদ হোসেন অন্য মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার কারণে আসতে পারেন নি। তবে, তাদের ব্যাখ্যার পেক্ষিতে আদেশ কি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

এর আগে অভিযুক্ত পুলিশের ওই তিন উপ-পরিদর্শককে আদালতে সশরীরের হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে বলেন নাটোরের একটি আদালত।

আসামি মো: স্বপন এবং আলহাজ্ব প্রামাণিক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকারোক্তি দেন তারা ভ্যান ছিনতাই করেছেন। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে মাদকের মামলায় আদালতে সোপর্দ করে। তারা গাঁজা বা কোনো ধরনের মাদক বহন করেননি।

পুলিশ অভিযুক্তদেরকে চিকিৎসার জন্য গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়েছিল এবং সেখানে চিকিৎসক মতামত দেন আসামিরা ভ্যান ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত এবং জনতার দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে।

আসামিদের বক্তব্য শুনে এবং চিকিৎসকের মেডিকেল রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে আদালতের সন্দেহের উদ্বেগ হয়। পরে ওইদিন মামলার সংবাদদাতা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহাবুর রহমান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহিদ হোসেন এবং থানায় সেদিন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরামুজ্জামানকে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সশরীরের হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সাঈদ।

মামলার সাক্ষীরা বলছেন, গত শুক্রবার ১০টার দিকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গুরুদাসপুরের পৌর কাউন্সিলর মো: মোখলেস দুইজনকে ধরে রাত ২টার দিকে ভ্যান বিক্রির ৫ হাজার টাকাসহ পুলিশে সোপর্দ করে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মোখলেছ বলেন, জনতার হাতে আটক দুই ছিনতাইকারীর কাছ থেকে তিনি কোন মাদক পাননি। অন্যান্য সাক্ষী এমনকি ভ্যান মালিক ফুরুও বলছেন ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা। তবে গাঁজা বা অন্য কোন মাদক পাওয়া যায়নি দাবি তাদের।

তবে পুলিশের এসআই মো: মাহাবুর রহমান এবং জাহিদ হোসেন দাবি করেছেন, পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার করেছে এবং পুলিশের কাছে জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর আছে। আর জব্দ টাকা কাউন্সিলরের কাছে দেওয়া হয়েছে।

নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আখতার শামীম আহমেদ রাজু বলেন, কোন আসামির সাজা কমাতে বা বাড়াতে মিথ্যা মামলা বা সাক্ষ্য তৈরি করলে তা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। তাছাড়া পুলিশ যদি মাদক দিয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি আদালতে পাঠায় তবে ওই পুলিশ সদস্যরা অবৈধ মাদক রাখার দায়েও অপরাধী হবেন।

আরও পড়ুন: পুলিশের গুলিতে শিশু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুল মতিন জানান, ওইদিন তিনি ছুটিতে থাকায় বিষয়টি ভালো করে জানতেন না। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে আসামিদের গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সেই মোতাবেক তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আব্দুল মতিন।

আদালতের শোকজ নোটিশ বা কারণ দর্শানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মতিন বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়ে তিনি জানেন না। আদেশের কপি হাতে পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker