লালমনিরহাট

“শিক্ষক-অভিভাবক দ্বন্দ্ব” বিদ্যালয়ে আসছে না কোনো শিক্ষার্থী

অভিভাবককে প্রধান শিক্ষক জুতাপেটা করার ঘটনায় গত তিনদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছেন না কোনো শিক্ষার্থী। এর ফলে ক্লাসরুমেই সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বুধবার (২৭ জুলাই) সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। এ সময় ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ক্লাসরুমে এবং লাইব্রেরিতে বসে সময় পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবি দেরিতে স্কুলে আসার বিষয়ে এ নিয়ে কথা এক অভিভাবককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জুতা দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই দুপুরে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন।এ ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে ওই বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ক্লাস রুমে এবং লাইব্রেরিতে সময় পার করছেন।

অভিভাবকরা দাবি করেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবির বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাবেন না তারা।অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির ক্ষমতার অপব্যবহার, অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো, দায়সারা দায়িত্ব পালন, সময়ের ব্যাপারে উদাসীনতা, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য উপকরণ সংকট, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের বিস্কুট বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ তুলে ধরেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকাসহ সাতজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকের বাড়িতে গিয়েছি। অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে পাঠাবেন না তারা।

ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেজাউনুল হক বাবু বলেন, একজন অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো মানে সব অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো। তাই আমরা লজ্জিত হয়ে ওই বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাচ্ছি না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বদলি না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের স্কুলে পাঠাব না। এদিকে আমাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন ওই প্রধান শিক্ষিকা।

এ বিষয়ে পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি বলেন, স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী না আসায় আমরা প্রত্যেকে অভিভাবকদের বাসায় গিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা অভিভাবক সমাবেশ ডেকেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওই এলাকার ১১ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। জুতা দিয়ে পেটানো ঘটনাটি অসত্য বলে দাবি করেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি জেনেছি, সমাধানের জন্য এক সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।

লালমনিরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসছে না বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker