লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে উদ্ভোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পুলিশ জাদুঘর

উত্তরের সীমান্তবর্তী ছোট্ট একটি জেলার নাম লালমনিরহাট। চারিদিকে ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদী দিয়ে ঘেরা জেলাটি। জেলাটির ঠিক উত্তরে ভারতের সীমান্ত। সেখানেও রয়েছে ধরলা নামে আরও একটি নদী। এক কথায় জেলাটির চারিদিকেই নদী আর নদী। সেই ছোট লালমনিরহাট জেলাতেই আর দুইদিন পর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম একমাত্র বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর।

আগামী বুধবার (২২ জুন) লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানা চত্বরেই জাদুঘরটির উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি মোঃ বেনজির আহমেদ।

১৯১৬ সালে নির্মিত একটি পাকা পরিত্যাক্ত প্রাচীন এই ভবনের ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই ভবনে জাদুঘরটি হচ্ছে। একশত বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক এ ভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরি করার উদ্যোগ গ্রহন করেন লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা পিপিএম।

২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন আবিদা সুলতানা পিপিএম। জাদুঘর নির্মানে পুর্বের কিছু অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার হাতীবান্ধা থানার পরিত্যক্ত পাকা ভবনে বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর স্থাপনের কাজ হাতে নেন তিনি ।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর লালমনিরহাটের কাজ সম্পন্ন। আগামী ২২ জুন জাদুঘরটির উদ্বোধন হবে বলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা পিপিএম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন । তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল জাদুঘরের বৃত্তান্ত। বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর লালমনিরহাটে মোট সাতটি গ্যালারি থাকছে। প্রতিটি গ্যালারিতে রাখা নিদর্শনগুলো দর্শক ও গবেষকদের সামনে তুলে ধরতে কাচের আবরণ ও আলোর ব্যবস্থা থাকবে।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এরশাদুল আলম বলেন , এই জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনী নানা স্মারক ও তথ্য সবার জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রাচীন এই ভবনের ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে জাদুঘরের মাধ্যমে।

গ্যালারিগুলোতে সুলতানি আমল ও মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল, ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের উদ্ভব ও বিকাশ নিখুতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গ্যালারি দুইয়ে এ থাকছে ব্রিটিশ আমল, আধুনিক পুলিশের যাত্রা। তিন নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধ, ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশ।

গ্যালারি চারে রয়েছে ডার্করুম, গ্যালারি। পাঁচে রয়েছে মুক্তাঞ্চলে মুক্তি পুলিশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ৬ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। সে সময় গঠন করা হয়েছিল মুক্তাঞ্চলের মুক্তি পুলিশ। তাদের সে সময়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরাসহ কিছু নিদর্শন থাকছে এই গ্যালারিতে।

গ্যালারি ছয়ে আছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারি সাতে বাংলাদেশ পুলিশ গ্যালারি, আধুনিক সময়কাল।

হাতীবান্ধা উপজেলার সুশিল সমাজ ও সাদারন জনগন জানান, হাতীবান্ধা থানার পুরাতন, পরিত্যাক্ত এ ভবনটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করা কখনই সহজ ছিলোনা। লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা ও হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলমের পরিশ্রমের ফসল বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর। আমরা হাতীবান্ধাবাসী দেশের প্রথম বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘরটি পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলাতানা পিপিএম জানান, দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, আমার পুলিশ সদস্য ও জেলাবাসীর সহযোগীতায় ইতিমধ্যে দেশের প্রথম পুলিশ জাদুঘর তৈরীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। অনেক ব্যাস্ততার মাঝেও আমাদের আইজিপি স্যার বেনজির আহমেদ আগামী ২২ জুন লালমনিরহাটে আসছেন এবং সেই দিনেই জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় জেলাবাসী তথা সমগ্র জেলাবসীর জন্য আমাদের এই পুলিশ জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker