জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বসতভিটার জমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় একপক্ষের অভিযোগ নিয়ে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এঘটনা পুলিশ আহত আসামীদের টেনে-হিঁচরে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় থেকে নিচতলায় নিয়ে এসে জেলহাজতে প্রেরন করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের এমন একটি অমানবিক আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানা যায়, সরিষাবাড়ী পৌর বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিলের ২০ শতাংশ বসতভিটার জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমানের সাথে বিরোধ চলে আসছে।
প্রতিপক্ষ মজিবুর রহমান দাবি করে আসছেন ওই ভিটার ২০ শতক জমি তার। আব্দুল জলিল জবরদখল করে ভোগকরছে। এ নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলমান। আদালতে মামলা করে ইতোমধ্যে আব্দুল জলিল তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকাল থেকে মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তার দলবল নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নেয় জমি দখল নিতে।
এদিকে আব্দুল জলিল তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসতভিটা রক্ষায় দরবদ্ধ হলে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমানের লোকজন দেশীয় অস্ত্র রামদা, লোহার রড়, নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে রামদা দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে আব্দুল জলিলসহ পরিবারের সবাই গুরুতর আহত করে। আহতরা হলেন, আব্দুল জলিল(৬৪) আব্দুল জলিলের স্ত্রী লাইলী বেগম(৫০),বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক(৩০) মেজো ছেলে ওয়াজ করোনী (২৫), ছোট ছেলে হামদাদুল হক(১৬)। তাদের সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জমিস মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন চারজনসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত চার আসামিকে আটক করে। হাসপাতালের শয্যা থেকে পুলিশ তাদের হাত পা দরে নামিয়ে নিয়ে আসে। পরে হাত-মুখ চেপে ধরে পিটিয়ে গাড়িতে তুলে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আটকৃতরা হলেন- আব্দুল জলিল (৬৪), আব্দুল জলিলের স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০),বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক(৩০) মেজো ছেলে ওয়াজ করোনী (২৫), বেদনা বেগম (২৪)। পরের বিকালে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আব্দুল জলিলের জামাতা চাঁন মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া অভিযোগ করে জানান, আব্দুল জলিল সোমবার রাতে থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আব্দুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। রাতে উল্টো ঐ ভিক্ষুক পরিবারের উপর মামলা নিয়ে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামীদের আটক করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে৷ নইলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জানান, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামীদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।