শুনতে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এবারের ঈদে বাড়ি ফেরার পথে খুব কম মানুষই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ হিসেবে অবৈধ ও বিপজ্জনক থ্রি হুইলার যান এবং মোটরসাইকেল চালকদের চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ১৩ জেলায় ২৮টি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে আরও ২৭ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গল (ঈদের দিন), বুধ ও বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২৮টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১১টি মোটরসাইকেলের কারণে এবং ১২টি থ্রি হুইলারের কারণে ঘটেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি, কারণ বেশিরভাগ দুর্ঘটনার খবর জানা যায়নি।
সাধারণত ছুটি শেষে রাজধানীতে ফেরার পথে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়, কারণ সেসময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি সেভাবে নজরে রাখেন না।
গত শনিবার হাজারো মানুষ নিজ জেলায় ঈদ উদযাপনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যান। ২৭ এপ্রিল থেকে ১ মে’র মধ্যে প্রায় ১ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ঈদের আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং পদ্মায় ২টি ফেরি টার্মিনাল নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা থাকলেও কর্তৃপক্ষের তীক্ষ্ণ নজরদারি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং ছুটি শুরুর বেশ কয়েকদিন আগে অনেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় বাকিদের জন্য ঈদে বাড়ি যাওয়া অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ মোটরসাইকেলে করে ঢাকা ছেড়েছেন, যেটি খুবই আশঙ্কাজনক।’
‘দীর্ঘ যাত্রার বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’, বলেন এই অধ্যাপক।
তিনি জানান, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও থ্রি হুইলার যানগুলো ফাঁকা সড়ক পেয়ে বেপরোয়াভাবে চলার কারণে ঈদের দিন থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে।
হাদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের উচিৎ হবে আজ ও কাল নজরদারি আরও বাড়ানো, কারণ এ দুদিন বিপুল পরিমাণ মানুষ ঢাকায় ফিরবেন।’
দেশের বিভিন্ন জেলায় মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার দুর্ঘটনা
রংপুরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে থ্রি হুইলারের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫ জন নিহত হন।
গঙ্গাছড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন জানান, নিহতদের প্রত্যেকেই থ্রি হুইলারের যাত্রী ছিলেন।
শনিবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে জয়পুরহাটে ৩টি পৃথক দুর্ঘটনায় ৪ ব্যক্তি নিহত হন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ ব্যক্তি মোটরসাইকেল ও ২ জন থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায় নিহত হন।
দিনাজপুরে গতকাল মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানি হয়।
সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হন।
বুধ ও বৃহস্পতিবার পাবনায় দুটি পৃথক দুর্ঘটনায় ৩ ব্যক্তি নিহত ও ২ ব্যক্তি আহত হন। যাত্রীরা মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার ও ট্রাকে ছিলেন।
টাঙ্গাইলে মঙ্গলবার ২ জন বাইক আরোহী নিহত ও আরও একজন আহত হন।
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার ও ব্যক্তিগত গাড়ির ৪টি দুর্ঘটনায় ঈদের দিন ও গতকাল মোট ৬ ব্যক্তি নিহত হন।
রোববার একটি বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাগেরহাটের ফকিরহাটে ৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
নিহতদের মধ্যে দুজন চালক ও ১০ মাস বয়সী এক শিশুও আছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ছাড়াও, ঢাকায় ৪ জন, ময়মনসিংহ ও বরিশালে দুজন করে এবং মাগুরা ও কক্সবাজারে ১ জন করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
