চাঁদপুর

বগি রেখেই ইঞ্জিন নিয়ে ছুটল ট্রেন!

একবার নয়, চারবার কপোতাক্ষ ট্রেনের বগি রেখে শুধু ইঞ্জিন নিয়ে রাজশাহী লাপাত্তা হয়েছেন ট্রেনচালক। এতে তিন ঘণ্টার ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ওই ট্রেনের যাত্রী ও রাজশাহী স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের। ফলে তাদের উভয়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

রেল সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী কপোতাক্ষ ট্রেনটি গতকাল শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর সোয়া ৬টায় খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি রাজশাহীতে প্রবেশ করার সময়সূচি দুপুর ১২টায়। তবে প্রথমে যশোর স্টেশনে ট্রেনের কাপলিং (জ) সমস্যার কারণে বগি রেখেই ইঞ্জিন সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পরে আবার ট্রেনটির ইঞ্জিনটি ফিরিয়ে আনার জন্য বগির গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ইঞ্জিনের এলএমকে (লোকো মাস্টার) ফোনে পুনরায় ফেরত আসতে বলেন। এরপর ইঞ্জিন বগির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আবার যশোর ত্যাগ করে। এরপর আবারও নোয়াপাড়া স্টেশনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।

এরপর কোট চাঁদপুর স্টেশনে পরপর দুইবার বগি রেখে ইঞ্জিন সফদারপুর স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় চলে যায়। যার দূরত্ব প্রায় প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার। ট্রেনচালক বা লোকো মাস্টার ঘটনাটি বুঝতে পেরে ফের পেছনে আসেন। এভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেনটি বিলম্বে বিকেল ৩টায় রাজশাহী এসে পৌঁছায়।

এরপর ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায় ৪টা ৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে অবস্থানরত যাত্রী বেলাল হোসেন এক যাত্রী বলেন, পর পর চার বার ট্রেনটি বগি রেখেই ইঞ্জিন ছেড়ে যায়। এতে অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। অনেকেই সময় মতো রাজশাহী পৌঁছাতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

অপর এক যাত্রী শিল্পী বসাক জানান, মেয়েকে নিয়ে তিনি রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্তু ট্রেনটি তিন ঘণ্টা দেরি করায় চিকিৎসকের চেম্বারে সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি। এখন বাধ্য হয়ে আজ রাতে তাদের রাজশাহী অবস্থান করতে হবে।

এ সময় রাজশাহী প্ল্যাটফর্মে অবস্থানরত যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। আবদুর রাজ্জাক নামে এক যাত্রী বলেন, জরুরি কাজে আমাকে রূপপুরে যেতে হতো। সেখানে ব্যবসায়িক মিটিং ছিল। কিন্তু ট্রেন বিলম্ব হওয়ায় আমার সব কার্যক্রম জলে গেছে। কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়টি মাইকিং করে জানাতেন, তবে আমাকে এ বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না।

ট্রেন পরিচালক তাপস কুমার দে বলেন, ট্রেনের বগির সঙ্গে ইঞ্জিনের জোড়া লাগানোর জন্য যে কাপলিং বা ‘জ’ ব্যবহৃত হয় সেটি বার বার ছুটে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অন্যান্য ট্রেন আমাদের ক্রস করার কারণেও সময় মতো পৌঁছাতে পারিনি।

জানতে চাইলে ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, কাপলিংয়ের সমস্যার কারণে ট্রেনটি খুব ধীর গতিতে ছেড়ে আসে। যার কারণে ট্রেনটি তিন ঘণ্টা বিলম্বে এসে পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে লোকো মাস্টার কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি ঈশ্বরদী থেকে উঠেছি। ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনের লোকো মাস্টার পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে আগের স্টেশনে কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার পাকশী (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমার দেখার মধ্যে পড়ে না। যেহেতু কাপলিং এর সমস্যার কারণে ঘটেছে সেহেতু এ বিষয়টি চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ ভালো বলতে পারবেন।

রাজশাহী স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সুরাইয়া পারভীন বলেন, কাপলিংয়ের সমস্যার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।

এ ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নতুন কোচ ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত করার আগে ট্রায়ালে রাখার কথা। হয়তোবা জনবল সংকটের কারণে এ ট্রায়ালটি দেওয়া হয়নি। যার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি মেকানিকাল বিভাগের তারাই ভালো বলতে পারবেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker