বিনোদন

জায়েদ-নিপুণ দ্বন্দ্ব: কী ভাবছেন সিনিয়র শিল্পীরা

আশানুরূপ নতুন চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে না। সিনেমা সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। ঠিক এমন সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন।

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের উত্তাপ এরপর আর থাকার কথা নয়। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক দুই প্রার্থীর বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে ঘটনা শেষে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন এই ঘটনার শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় চলচ্চিত্রপ্রেমী সাধারণ মানুষ।

পরস্পরের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছেন জায়েদ খান ও নিপুণ। আপিল বোর্ড, মন্ত্রণালয়, উকিল নোটিশসহ আইনের সর্বোচ্চ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চেষ্টা করছেন দুজন। এই নির্বাচনে চলচ্চিত্র শিল্পের কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে তার হিসাব কেউ না কষলেও এখন কাঠগড়ায় ‘চলচ্চিত্র’। এই শিল্পের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন চলচ্চিত্রের সিনিয়র শিল্পীরা?

সোহেল রানা শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে বর্তমানে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। চলমান বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, ‘টেলিফোন সাধারণত রিসিভ করি না। কারণ দু’চার মিনিট কথা বললে আমি টায়ার্ড হয়ে যাই এবং কনসেন্ট্রেশন হারিয়ে ফেলি। আবার সারাদিন একটা চেয়ারে চুপ করে বসে থাকাও ভালো লাগে না। এ জন্য দু’একটা ফোন রিসিভ করি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে দুটো কারণে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। একটা হচ্ছে সে সময় আমি আইসিউতে ছিলাম। কোনো জিনিস না জেনে বা না শুনে বলাটা ঠিক হবে না।’

তবে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এই ড্যাশিং হিরো বলেন, ‘তবে ফেইসবুকে ছবি-টবি দেখে একটা জিনিস আমার খটকা লাগছে। এফডিসিতে প্রচুর মানুষ! এদের অনেককেই আমি চিনতে পারছি না। মনে হচ্ছে, কাওরান বাজার এখন এফডিসিতে বসেছে।’

বহিরাগতদের বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়া উচিত মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘চলমান বিষয়ে যতটুকু টেলিভিশন ও ফেইসবুকে দেখছি তাতে মনে হলো নট ফেয়ার। এ বিষয়ে সিনিয়রদের ভূমিকা রাখা উচিত। আমার কাছে মনে হচ্ছে আলমগীর একা পেরে উঠতে পারছে না।’

চলচ্চিত্রের সিনিয়র নায়কদের মধ্যে উজ্জ্বল অন্যতম। এই মেগাস্টার বলেন, ‘শিল্পী সমিতির বিষয়টি যদি সমস্যা ভাবেন, তা হলে সমস্যা। আর না ভাবলে এটা কোনো সমস্যাই না। নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সাবাই চলচ্চিত্র শিল্পী। যেহেতু তারা নির্বাচিত সে কারণে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এদের সংখ্যা ২০ জন। এই ২০ জন শিল্পী তাদের (জায়েদ-নিপুণ) ডেকে নিয়ে বিষয়টি যদি বোঝায় তাহলেই এই মনোমালিন্য দূর হতে পারে।’

এ ক্ষেত্রে সিনিয়র শিল্পীরা ভূমিকা রাখতে পারে- কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলে উজ্জ্বল বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটা জায়গায় যেতে পারি না। এটা আমাদের উচিত হবে না। আমরা দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে নিজেদের ইমেজ তৈরি করেছি। শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের বিতর্কিত করা সঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। অধিকাংশ সিনিয়র শিল্পী আজ নেই। আমরা ক’জন বেঁচে আছি। আমরা সবার। কোনো ব্যক্তি বিশেষের না। এখন নির্বাচিত ২০ জনই একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

‘শুধু সাধারণ সম্পাদক দিয়ে সমিতি চলবে না। আমি মনে করি, আদলতের পথে না হেঁটে নিজেরা বসে একটা সমাধানে যাওয়া উচিত।’ যোগ করেন উজ্জ্বল।
চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের মুখপাত্র কিংবদন্তি নায়ক আলমগীর এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কাজ নেই বলেই তো বিভক্তিটা হচ্ছে। কাজ না থাকলে মানুষ কী করে? খই ভাজে। কাজ নাই, তাই তারা খই ভাজছে।’

শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। নিপুণ তার প্যানেল থেকেই সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন। তিনিও জায়েদ-নিপুণের ব্যাপারে মন্তব্য করতে চান না। ‘তারা আমার কথা শুনবেন না’ উল্লেখ করে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’খ্যাত এই নায়ক বলেন, ‘ব্যাপারটা উচ্চ আদালতে গড়িয়েছে। আদালতই রায় দেবেন।’

তবে ‘জায়েদ সাধারণ সম্পাদক হলেও আমার লাভ নেই, নিপুণ হলেও ক্ষতি নেই’ বলে মনে করেন তিনি।

১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এই সমিতি গঠনের প্রস্তাব করেন নায়ক সোহেল রানা, প্রতিষ্ঠা করেন নায়ক ফারুক এবং সমিতি গঠনে সহায়তা করেন নায়ক উজ্জ্বল। এই তিনজনের উদ্যোগে গঠিত শিল্পী সমিতির প্রথম সভাপতি নায়করাজ রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ শরীফ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker