কিশোরগঞ্জ

শীত উপেক্ষা করে ব্রম্মপুত্রে বড়শি দিয়া মাছ শিকার

শীত উপেক্ষা করেও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের বিভিন্ন এলাকাসহ প্রতিবেশী উপজেলা থেকেও আসছে শিকারী, অস্ত্র হিসেবে সবার হাতে প্রতিয়মান হচ্ছে, রং বেরংগের ছিপ, চোখ ধাধানো অত্যাধুনিক ছিপ। ভাঙ্গন প্রতিরক্ষা বাঁধের ব্লকে বসেই নদের জলে টোপ সম্বলিত বড়শি ফেলে তুলে নিচ্ছে বহু প্রজাতির মাছ।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানতে পারি, এই শুকনো মৌসুমে ব্রম্মপুত্র নদে পানি কম, উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের বুক ছিরে বয়ে চলা নদের বামতীরের ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রয়াত মন্ত্রী জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ডিও লেটারের মাধ্যমে সিদলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব সিরাজ উদ্দীন (এম এ)এর প্রচেষ্টায় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গ দেওয়ায় নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধের পানির কুল ঘেঁষা ব্লকে বসে আপন মনে মাছ ধরে শিকারীরা।

আরো জানান, কখনো কখনো কোনো কোনো শিকারী প্রচন্ড ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে অপলক দৃষ্টি নদীর জলে ভেসে থাকা ফিরতিংগার (ফাৎনা) উপর, কখন মাছে ঠোকর দেয়ল প্রতিক্ষায় শীতল হাওয়া, গুরি গুরি বৃষ্টি কিংবা শৈতপ্রবাহ শিকারীর উপর দিয়ে চলে যায় কোনা অক্ষরেও টের পাইনা।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের  হাজীবাড়ী নামক স্থানে বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গফরগাঁও এর বালুয়াকান্দা, নিধিয়ার চর হয়ে হোসেনপুরের জিনারী ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রাম হয়ে ব্রম্মপুত্রের শাখা নদী এসে আবার মিলিত হয়েছে হাজীবাড়ীর পাশ ঘেষে ব্রম্মপুত্রে, শিকারীদের উপস্থিতি ঠিক এখানটাতেই রমরমা। এছাড়াও প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর যায়গায় যায়গায় দেখা মিলছে স্থানীয় ও আগন্তুক মৎস্য শিকারীদের।

জলে ছিপ মেলে ফিরতিংগা বা ফাৎনার দিকে আপন মনে চাতকের ন্যায় তাকিয়ে থাকা মনমোহিনী একটি কারবার। ছিপ ফেলে মাছ ধরা পৃথিবীব্যাপী মানুষের অন্যতম একটি শখ। বাশেঁর শক্ত ও দৃঢ় কাঠিতে সূতা বেঁধে নদের পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। সূতার অন্য প্রান্তে থাকে লোহার তৈরী বড়শী। বড়শীতে টোপ লাগিয়ে ছিপ ফেলা হয়। মাছ টোপ গিললে সূতায় টান পড়ে এবং তখন ছিপ দ্রুত টেনে তোলা হয়। সূতার মাঝামাঝি থাকে ফাৎনা যা পানিতে ভেসে থাকে। টোপে মাছ ঠোকর দিলে ফাৎনা নড়ে ওঠে। টোপ-গেলা মাছ নড়াচড়া শুরু করলে ফাৎনা নড়তে থাকতে, ডুবু ডুবু হয়। তাতে বোঝা যায় মাছ টোপ গিলেছে। তখন ছিপ দ্রুত তুলে নিতে হয়। এভাবেই দিনভর চলছে শিকারী ও মাছের যুদ্ধ।

জানা যায় – বোয়াল,বাইম,ঘাওরা, বাঘার বা রিডাও মিলছে কারো কারো বড়শিতে। প্রকৃতি যখন রাতের আধার কাটিয়ে প্রাত সাজে ব্যাস্ত,পূর্ব দিগন্তে সূর্যি মামার তন্দ্রা মুক্ত ভাব। সেই পাখির ডাকা ভোর কাটিয়ে শুরু হয় দূরান্ত থেকে মাছ শিকারীদের আবির্ভাব। কেউবা শখে কেউবা পেশাগত কেউবা সাংসারিক মাছ চাহিদা মিঠাতে আগমন শিকারীদের সাথে কথা বলে জানতে পারি।

সাহেবের চর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ সফির উদ্দীন জানান, সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বহিরাগত অসংখ্য শিকারী দেখা যায়, আবার রাতেও কিছু শিকারীকে বড়শি দিয়া মাছ ধরতে দেখা যায়।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখতে পাই, একজন বহিরাগত শিকারী একটা বোয়াল মাছ তুলেছে, স্থানীয় কয়েকজন অনিক মিয়া,ইপক হাসান, রিদয় মিয়াসহ অনেকেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সত্যিকার অর্থে বড়শি দিয়া মাছ শিকার এক কৌতুহলী  রঙ্গময় অধ্যায়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker