জাতীয়

দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের আশায় গুড়ে বালি

বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল ভারত,

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের একরকম দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল। যেকোনো উপায়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিপরীতে নয়া দিল্লি একতরফা সুবিধা আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশি কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম। তাদের উসকানিতে আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা পর্যন্ত হয়। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

এর ধারাবাহিকতায় বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। দুই দেশের সরকার প্রধানের সাক্ষাতের পর দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে চলেছে, এমনটা আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ভারতের নতুন এক সিদ্ধান্তে সেই আশায় গুড়ে বালি।

বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় ভূখন্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানির সুবিধা সংক্রান্ত ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থাটি বাতিল করেছে ভারত। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্যে এক নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ এটি বিশেষ করে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস এন্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুনের এক আদেশ, যেখানে ভারতীয় স্থল কাস্টমস স্টেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বা ক্লোজড বডি ট্রাক সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের পথে পাঠানো যেত, সেটি এখন বাতিল করা হয়েছে।

ভারতের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ভারতের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য সম্পন্ন হতো। ভারতের গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) এর প্রধান এবং সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ভারত গেল দুই দশক ধরে বাংলাদেশের জন্য একতরফাভাবে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিয়ে এসেছে কিন্তু বাংলাদেশের লালমনিরহাটে চীনের সহায়তায় একটি বিমান ঘাঁটি পুনর্জীবিত করার পরিকল্পনা এবং চিকেনস নেকের নিকটে একটি কৌশলগত ঘাঁটি তৈরির প্রচেষ্টা এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এর ১৯৯৪ সালের ট্যারিফ এন্ড ট্রেড চুক্তি (জিএটিটি) এর ধারা ৫ অনুযায়ী, সব সদস্য দেশকে স্থলবেষ্টিত দেশের পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে হবে। ট্রানজিটে দেরি করা, অপ্রয়োজনীয় বাধা সৃষ্টি করা কিংবা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা নিষিদ্ধ। ফলে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত ডব্লিউটিও এর প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker