আবহাওয়া ও জলবায়ু

৪ বিভাগে ভারি বর্ষণের সতর্কতা, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ফেনীতে রেকর্ড বৃষ্টিতে বন্যা, বুধবার থেকে পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে সক্রিয় রয়েছে বৃষ্টি। এতে মঙ্গলবার রংপুর বিভাগ ছাড়া প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি বেড়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের জেলা ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ঐ জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এই ভারি বর্ষণের কারণে ফেনী, খুলনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা এবং ফেনীর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামীকালের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ভারি বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে এবং সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

ফেনীতে ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতি

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে সিলোনিয়া নদীর পানি জেলার সুবার বাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, মূলত অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকতে পারে, তবে এরপর থেকে পানি স্থিতিশীল হয়ে ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করবে। এতে বুধবার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

সারাদেশে বৃষ্টিপাতের চিত্র ও কারণ

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ৮৯ মিলিমিটার বা এর বেশি বৃষ্টি হলেই তাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত ধরা হয়। ফেনী ছাড়াও দেশের আরও অন্তত ১১টি অঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টি হয়েছে, যার সব ক’টির অবস্থান দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২৪৮ মিলিমিটার, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ২২৫ মিলিমিটার, নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ১৮৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৬৬ মিলিমিটার, ভোলায় ১৫৪ মিলিমিটার ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় এ সময় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, মৌসুমি বায়ু স্থলভাগে সক্রিয় থাকা, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বাতাসের প্রবাহ এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় লঘুচাপের প্রভাব—এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল।

ভারি বর্ষণের সতর্কতা ও সমুদ্র সংকেত

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ভারি বর্ষণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।

ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে সারাদেশে বৃষ্টি অনেকটাই কমে আসবে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker