অর্থনীতি

পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত!

দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ভরা মৌসুমে এক লাফে এর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।

বাজারে সরবরাহের জন্য কৃষকের কাছ থেকে যারা সরাসরি কেনেন, তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুত শুরু করেছেন। একটি চক্রটি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমাদানি বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে বাজারে অস্থিরতার পাঁয়তারা করছে। তারা সরকারকে এ বার্তা দিতে চাচ্ছে, ভারতের পেঁয়াজ ছাড়া দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব কোনোভাবেই সম্ভব না।

আর এই চক্রান্তের অংশ হিসাবে তারা দেশে উৎপাদিত ভরা মৌসুমের পেঁয়াজের অবৈধ মজুত শুরু করেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর অনলাইন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রমজানের পর থেকে পেঁয়াজের দাম কয়েক ধাপে বাড়িয়ে এখন তা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। আরও ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে-এই চক্রটি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে ওঠাতে এখন থেকেই অপতৎপরতা শুরু করেছে।

জানা গেছে, রমজানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা দরে। ঈদের পর তা ৪০ টাকা এবং পরে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক কেজি পেঁয়াজ ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর শুক্রবার ছুটির দিন সেই পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর পাইকারি আড়ত কাওরান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. মকবুল জানান, সেই পুরোনো সিন্ডিকেট অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চক্রটি ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু করেছে।

জুলাইয়ের মধ্যে চক্রটি কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বর্তমান দামেরও দ্বিগুণ করার ছক কষছে। এরই অংশ হিসাবে তারা ভরা মৌসুমের পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুত করে রাখছে। দেশীয় ‘হালি’ পেঁয়াজ থেকে দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ মেটানো হয়। জানুয়ারি পর্যন্ত এ পেঁয়াজ আবাদ হয়। মাঠ থেকে তুলে বাজারে আসতে মার্চ-এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে যায়।

সে হিসাবে পেঁয়াজের মৌসুম মাত্র শেষ হচ্ছে। অথচ এরই মধ্যে দাম দিন দিন বাড়ানো হচ্ছে। এতে পাইকারি বিক্রেতারা বাড়তি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দামে বিক্রি করছে বলে জানান তিনি। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।

যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে ছুটির দিন বাজার করতে আসা মো. শামছুজ্জামান তুর বলেন, ঈদের কয়েকদিন পর বাজারে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। রমজানে বাজারে একপ্রকার স্বস্তি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অসাধু চক্র পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করে ফেলছে।

যে পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় কিনতাম, আজ তা ৬৫ টাকায় কিনেছি। সবজিরও দাম বেড়েছে। হাত দেওয়া যাচ্ছে না। সরকারের উচিত হবে রমজানে যেভাবে বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, এখনো সেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এতে আমরা একটু হলেও স্বস্তিতে থাকবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, পণ্যের বাজার এখন কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, সরকারের কাছে সে তথ্য থাকার কথা। যারা হঠাৎ করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতার চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

কারণ, রমজানে বাজারে যে পরিমাণে স্বস্তি বিরাজ করেছে, তা সব মহলে আলোচনা হয়েছে। এ স্বস্তি ধরে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকেই তৎপর হতে হবে। এতে ক্রেতারা উপকৃত হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম কারা বাড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করতে তিন স্তরে তদারকি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker