খেলাধুলা

শান্তদের বিশ্বাস করে যেন ভুলই করেছেন সিমন্স

জন্মদিনের উপহার হিসেবে শিষ্যদের কাছে সিলেটে জয় চেয়েছিলেন সিমন্স। কিন্তু আশাহত হয়েছেন তিনি।

হাট-বাজারে একটা কথা প্রচলিত আছে—‘বাকির কথা ফাঁকি’। অর্থাৎ বাকি দিয়েছেন তো ফাঁকির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ ফিল সিমন্স মজা করে কি কিছু সময়ের জন্য নিজেকে এমনটা ভাবতে পারেন! হয়তো পারেন। কেননা দোকানদারদের মতো কোনো কিছু বিক্রি না করলেও সিমন্সের যে প্রাপ্তির সুযোগ ছিল।

কিন্তু সেটা এখন হাতছাড়া হয়েছে তার। সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হারায়। গত ২০ এপ্রিল টেস্ট সিরিজ শুরুর দুই দিন আগে জীবনের ৬২ বসন্তে পা দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ। এমন বিশেষ দিনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, শিষ্যদের কাছে জন্মদিনের উপহার হিসেবে এখন কিছু চান কি না?

সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন শুনে সিমন্স বলেছিলেন, ‘এখন কিছু চাই না। টেস্ট জয়ই আমার জন্য বড় উপহার হবে।’ অন্য সব গুরুর মতোই শিষ্যদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন সিমন্স। বিশ্বাস রাখার যথেষ্ট কারণও হয়তো তার কাছে ছিল। ঘরের মাঠে সিরিজ বলে কথা! প্রতিপক্ষ যখন জিম্বাবুয়ে, জয়ের আশা জাগা অমূলক নয়।

নিজেদের সোনালি সময় পার করে আসা আফ্রিকান দলটা এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে আছে। তাই শিষ্যদের ওপর ভরসা রেখে নিজের জন্মদিনের উপহারটা বাকির খাতায় রেখে দিয়েছিলেন সিমন্স। অন্য কোনো দল (অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা) হলে হয়তো এমনটা করতেন না কোচ!তবে সিমন্স যেন ভুল পাত্রে নিজের বিশ্বাসকে সঁপে দিয়েছিলেন। যতই ঘরের মাঠে খেলা হোক না কেন, আর সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ কোচের ভুল ভেঙেছে।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে কস্মিনকালেও ধারাবাহিক ছিল না। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটের এই কুলীন সংস্করণে বাংলাদেশ চলছে এলোমেলো পা ফেলে। মাঝে মাঝে যে চমক দেখায়নি তা অবশ্য নয়। ২২ জয় তো আর এমনি এমনিই আসেনি। তবে জয়গুলো ব্যতিক্রম হিসেবে ধরলে একটু নিরাপদ থাকা যায়। পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হয়। দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে ২২ জয় এসেছে ১৫১ ম্যাচে। আর ১৮ ড্রয়ের বিপরীতে হার ১১১।

22

পরিসংখ্যানেই প্রমাণ করে টেস্টে বাংলাদেশ কেমন ধারাবাহিক ছিল। সঙ্গে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে চোখ বুলালে বিষয়টা পরিষ্কার হয়। পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই করার পর নিজেদের পুরনো চেহারাতেই আবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ৬ টেস্টের পাঁচটিতেই হেরেছে। আর ‘সবেধন নীলমণি’ হয়ে জয়টি এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত-মুশফিকুর রহিমরা।

তবে মাঠে নামার পর শান্তদের কাছে সবকিছুই বুমেরাং হয়ে ফিরে এলো। সেটিও সর্বশেষ ১০ টেস্টে জয়ের মুখ দেখতে না পারা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সব কিছু নিজেদের পক্ষে থাকার পর হারকেই যেন পছন্দ করল বাংলাদেশ। হারকে কেউই বেছে নিতে না চাইলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলার কারণ, সিলেটে তাদের খেলার ধরন। বোলাররা অবশ্য দারুণ কিছুই করেছেন। কিন্তু টেস্টে জয় বা ড্র পেতে হলে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই ব্যাটাররা কী করলেন? কিছুই যে করেননি এমন নয়, রান না করলেও আসা-যাওয়ার লাইনটা দীর্ঘ করেছেন।

প্রথমবার খেলতে আসা জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট অপরিচিত কন্ডিশনে দুই ইনিংসে ফিফটি করে দলের জয়ে যখন অবদান রাখছেন তখন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মিলিয়েও পঞ্চাশ রানের জুটি গড়তে পারেননি। আবার সেট হওয়া ব্যাটাররা যখন আশা দেখিয়েছেন ঠিক তখনই ভূত মাথায় চেপেছে। বাজে শটে ইনিংসের মৃত্যু ডেকে এনে পরে সংবাদ সম্মেলনে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

যেমনটা গতকাল ম্যাচ শেষে হারের সকল দায় নিজের কাঁধে নিয়ে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করলেন অধিনায়ক শান্ত, ‘আজকের ম্যাচ নিয়ে যদি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেন একজন অধিনায়ক হিসেবে, তাহলে পুরো ম্যাচটা আমি একা হারিয়ে দিয়েছি। সত্যি কথা। কারণ সকালের ওই আউটটাতেই (সব কিছু) নষ্ট হয়ে গেছে। এই পুরো ম্যাচে সবার দিকে আসলে (অভিযোগ) নিয়ে যেতে চাই না। পুরো দায়ভার আমি নিতে চাই। খুব বাজে সময়ে আমি আউট হয়েছি।’

22

ম্যাচ হারার পর এমন অকপট স্বীকারোক্তি অবশ্য নতুন নয়। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বা ক্রিকেটার পরিবর্তন হলেও তাদের মুখের কথা একই থাকে। অথচ কোন সময় কোন শট খেলতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে নিজেদের সংযম করতে হবে সবকিছু বুঝেন তারা। কিন্তু ম্যাচে প্রয়োগের সময় যেন খালি মাথায় মাঠে নামেন। 

ক্রিকেটের এসব বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সেই মুশফিকুর রহিমও আবার পারফরম্যান্সে পেছনে পরে আছেন। এতটাই বাজে ছন্দে আছেন যে, সবশেষ ১২ ইনিংসে করতে পারেননি একটি ফিফটিও। যেন নিজের জায়গাটা ধরে রেখেছেন ‘সিনিয়র’ কোটায়। কারণ, বয়স তো আর কম হলো না। সামনের মাসেই ৩৮ বছর পূর্ণ করবেন তিনি। অন্য দুই সংস্করণ থেকে অবসর নিলেও অভিজাত সংস্করণে এমন পারফরম্যান্সের পরও একাদশে টিকে যাওয়ার কারণ আর কীবা হতে পারে!

সমন্বয়হীনতার অভাবে তাই সিলেট টেস্টে যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। এতে হারের ক্ষত নিয়ে সিমন্সের আফসোসটা আরো বেড়ে গেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিকই হয়তো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজবেন বাংলাদেশি কোচ। আর সেটি হচ্ছে ঠকে যাওয়া সেই সব দোকানদারদের মতো। যারা এমন কিছুর থেকে রক্ষা পেতে দোকানে বড় অক্ষরে ঝুলিয়ে রাখেন কিংবা মুখে বলে দেন, ‘বাকি চাহিয়া আর লজ্জা দিয়েন না’।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker