কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি-হামলার ঘটনায় সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক রানা। তিনি জেলার আদর্শ সদর উপজেলার শহরতলীর ডুমুরিয়া চাঁন্দপুর এলাকার মো. আমির হোসেনের ছেলে।
মামলায় অভিযোগ বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সাবেক এমপি বাহারের হুকুমে কয়েকজন আসামির সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে অন্য আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। গুলি ও হামলায় ছাত্র-জনতার কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও অনেকে রক্তাক্ত জখমসহ গুরুতর আহত হয়।
মামলায় আলোচিত অন্য আসামিরা হচ্ছেন আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বকুল, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু,
বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেল,
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া ,
সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন ফেরদৌস, সাবেক পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন সাদী, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাড. ফাহমিদা জেবিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) দুই জন সেকশন অফিসার, কুবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা রেজা-ই এলাহী ও বিপ্লব চন্দ্র দাস।
এছাড়াও সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু কাউন্সিলর, আদর্শ সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান, অন্তত ২০-২২ জন আইনজীবী, জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন জানান, মামলার বিষয়টি জেনেছি। এভাবে আইনজীবীদের নামে মামলা করার বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আসন্ন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা। এর আগে আমাদের কক্ষে তালা দেওয়া হয়।
এ মামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। তাই ভিডিও ফুটেজ দেখে ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাদের জড়িত পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্তকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
মামলার বাদী মো. ইনজামুল হক রানা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিল। এর ভিডিও ও স্থিরচিত্র আমাদের কাছে আছে। তাই সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলাটি করা হয়েছে।
অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। বিকেলে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম জানান, বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।