রাজনীতি

বিএনপির মহাসমাবেশ নতুন করে গ্রেপ্তার আরও ২০৫ জন কারাগারে

বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে আরও ২০৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী ছাড়াও সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার অভিযান চালিয়ে এসব নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আজ শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। সবাইকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বিএনপির এই কর্মসূচি সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবারও ১২৯ জনকে আদালতে পাঠিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে দুই দিনে ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকার পুলিশ।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঢাকায় আগামীকাল (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এই সমাবেশ সামনে রেখে গতকাল ঢাকায় ঢোকার পথগুলোয় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকায় ঢোকার আগে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আবার কয়েক দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের ধরে নিয়ে পুরোনো নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

ঢাকার আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরের ওয়ারী এলাকায় ২২ বিএনপি নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৭ জনকে। কাফরুল থানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ বিএনপি নেতা–কর্মীকে। পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৯ নেতা–কর্মীকে।

এ ছাড়া গেন্ডারিয়া থানা এলাকা থেকে ৩ জন, সূত্রাপুর থানার ৬, ক্যান্টনমেন্ট থানার ১, খিলখেত থানার ৩, নিউমার্কেট থানার ৪, কলাবাগান থানার ১, রামপুরা থানার ৩, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ১, হাতিরঝিল থানার ১, তেজগাঁও থানার ৩, আদাবর থানার ৫, মোহাম্মদপুর থানার ৩, রমনা থানার ৩, শাহবাগ থানার ২, কাফরুল থানার ১৫, মতিঝিল থানার ৩, শাহজাহানপুর থানার ১, গুলশান থানার ১, বাড্ডা থানার ৬, বংশাল থানার ৬, কোতোয়ালি থানার ২, চকবাজার থানার ৬, কামরাঙ্গীরচর থানার ১০, লালবাগ থানার ৪, কদমতলী থানার ১৮, শ্যামপুর থানার ২, হাজারীবাগ থানার ৬, উত্তরখান থানার ৫, ডেমরা থানার ৪, খিলগাঁও থানার ৮, মুগদা থানার ২, দারুসসালাম থানার ১০  ও শাহ আলী থানা এলাকায় গ্রেপ্তার ৬ জনকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।

‘আমরা রাজনীতি বুঝি না, পেটনীতি বুঝি’

কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ গত রাতে রতন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। রতনের মা জামিলা খাতুন ছেলেকে দেখতে আজ বেলা ১১টার সময় ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে আসেন। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তিনি ছেলের মুখ দেখতে পারেননি।‘আমার ছেলে পেশায় একজন রিকশাচালক। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরও ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তার করার পর আমি থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।’
Image
রতনের বাবা আবদুল খলিলও একজন রিকশাচালক। তিনিও তাঁর ছেলেকে দেখতে পারেননি। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে খলিল ‘আমরা গরিব মানুষ। আমরা রাজনীতি বুঝি না, পেটনীতি বুঝি। কিন্তু ছেলেকে আমার সন্দেহজনকভাবে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে পুলিশ। এখন ছেলেকে কীভাবে জামিন মুক্ত করব, জানি না।’ রতনের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের স্বজনেরা আজ সকাল থেকেই আদালতের সামনে ভিড় করেন। দুপুর ১২টার পর থেকে বিভিন্ন থানার পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ঢাকার আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসে।
বিকেল চারটার সময় ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয় জাহিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর স্ত্রী নাসরিন ‘গতকাল রাত ১০টার সময় আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আজ বিকেলে তাঁকে থানা থেকে আদালতে আনা হয়েছে।’বিএনপি নেতাদের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম গতকাল বরিশাল থেকে লঞ্চে এসে সদরঘাটে নামার পর তাঁর পরিচিত শেখ মহিউদ্দিনসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাঁদের ওয়ারী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker