রাজনীতি
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে 'সেকেন্ড রিপাবলিক'-এর রূপরেখা তুলে ধরলেন এনসিপি আহ্বায়ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ রবিবার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। বিকেলের এই সমাবেশে তিনি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গড়ার এই রূপরেখা তুলে ধরেন।
এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহার
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।” এই ইশতেহারের মূল দফাগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক: একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠন।
- জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার: জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি এবং এর সঙ্গে জড়িত সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।
- গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার: দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার সাধন।
- ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার: একটি ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং প্রচলিত আইনগুলোর সংস্কার করা।
- সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন: সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা।
- জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে তোলা।
- গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার: গ্রাম পার্লামেন্ট ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
- স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ: একটি স্বাধীন গণমাধ্যম এবং শক্তিশালী নাগরিক সমাজের বিকাশ ঘটানো।
- সার্বজনীন স্বাস্থ্য: সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
- জাতি গঠনে শিক্ষানীতি: জাতি গঠনের লক্ষ্যে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা।
- গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব: গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটানো।
- ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা: সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা নিশ্চিত করা।
- নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন: নারী নিরাপত্তা, অধিকার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
- মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি: একটি মানবকেন্দ্রিক এবং কল্যাণমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- তারুণ্য ও কর্মসংস্থান: তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সুযোগ বাড়ানো।
- বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি: বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি গ্রহণ করা।
- টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব: টেকসই কৃষি ব্যবস্থা এবং খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা।
- শ্রমিক-কৃষকের অধিকার: শ্রমিক ও কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করা।
- জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা: জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
- নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা: পরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা: জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং নদী ও সমুদ্র রক্ষা করা।
- প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার: প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা।
- বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি: দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা।
- জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল: একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল তৈরি করা।
ইশতেহার ঘোষণার পেছনের প্রেক্ষাপট
ঘোষণা শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, এক বছর আগে এই শহীদ মিনারেই তারা স্বৈরাচারমুক্ত দেশ গড়ার শপথ নিয়েছিলেন। জনগণের সহায়তায় সেই ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আবারও সবাইকে এই ২৪ দফাকে বাস্তবে রূপান্তর করে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আহ্বান জানান।