স্বার্থপর মানুষদের অজুহাত বেশি, বাস্তবিক অর্থে সমাজ সংসারে স্বার্থপর মানুষেরা চৌকস আত্মকেন্দ্রিক জ্ঞানী হয়। এরা শুধু নিজেকে ভালোবাসে, অন্যের চাওয়া পাওয়ার থেকে সর্বদা নিজের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দেয়। আপনি যদি ক্রমাগতভাবে এরকম স্বার্থপর, আত্নকেন্দ্রিক মানুষের সাথে ওঠাবসা করতে থাকেন তবে আপনার জীবন হয়ে উঠবে শোচনীয়।
আসলে কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে একজন মানুষকে স্বার্থপর বলা যেতে পারে? স্বার্থপর তারাই যারা সর্বদা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং অন্যের চাহিদা, অনুভূতির কথা যারা বিবেচনা করেনা।অন্যের বিপদে অচেনা ভান করে থাকে।মৃত্যু জনিত বিষয়াদিতেও অজুহাত দেখিয়ে থাকে।
“পৃথিবীতে নিজে ভালো” থাকতে চাইলে “স্বার্থপর ” হয়ে যাও … আর “মানুষের কাছে ভালো হয়ে” থাকতে চাইলে “নিঃস্বার্থ ” হও !
স্বার্থপর এই পৃথিবীতে সময়ের সাথে সাথে সবাই স্বার্থপর হয়ে যায় ।
স্বার্থপর হওয়া দোষের কিছু না বরং সফল হতে হলে এর প্রয়োজন অনস্বীকার্য । স্বার্থপরতা তখনই দোষের হয় যখন তা ‘আমি’ বা ‘আমার’ সীমানা পার হয়ে অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করে । অন্যের ক্ষতি না করেও স্বার্থপর হওয়া যায় । প্রবাদে বলে মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। তবে কোন বিষয়টিকে আসলে স্বার্থপরতা বলে? খুব বেশি স্বার্থপরতা কি নিজেকে একাও করে তোলে না?
সমাজে নানা শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে, বিভিন্ন ধরণের মানুষের উদ্ভব ঘটে। সমাজে চলারপথে বিভিন্ন মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। সবার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে না কিছু সংখ্যক মানুষের সাথে আমাদের ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ যারা সবর্দা সবার স্বার্থ নিয়ে কাজ করে বা চিন্তা করে আর অধিকাংশ মানুষ নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় তাদেরকে মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। তারা বিভিন্ন সামাজিকমূলক কাজে নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় । সমাজে কেউ মানুষের কাছে শ্রদ্ধা পাত্র আবার কাউকে মানুষ ঘৃণা করে। তার ব্যবহার আচার আচরনে কারনে অন্য মানুষের কাছে তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। মানুষ যদি সর্বজন কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে তাহাকে যে বিষয়টি তার কাছে থাকা অত্যন্ত জরুরী তা হল ন্যায়পরায়নতা আর মানুষের ন্যায়নিষ্ঠতা। তখনিও বুঝা যাবে যখন সে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত থাকলে সে যদি ন্যায়নীতি তার মধ্যে কাজ করে তখন সে মানুষ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা উর্ধে উঠে। মানুষের নিজের স্বার্থের আঘাত হলে, আপনজন পর হয়ে যায়, দেখে না সে ন্যায়নীতি, তখন তার কাছে মানুষ্যত্ব বলতে কিছু থাকে না। সে নিজের আপনজন ও কাছের মানুষ কে কিছু বলতে দ্বিধাবোধ করবে না! সমাজে মানুষের কল্যাণমুলক কর্মকান্ড বা কাজ নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত থাকলে বা আঘাত আসলে বাধা দেয়। নিজের স্বার্থ থাকলে সমাজে মানুষের কল্যাণে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করলে সেই মানুষ সর্বজন কৃত সকলে কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়ে থাকে। এরকম অনেক উদাহরণ আমাদের আশে পাশে ঘঠে যাচ্ছে তখন তার কাছে মানবসেবা বলতে কিছু থাকে না। তখন সে জ্ঞান বিবেক ও বুদ্ধির সমন্বয় সে বিচার করবে কোনটি সঠিক তাহলে সে ন্যায়, ইনশাফের স্বার্থে নিজের ভিতরে স্বার্থ ছাড় দিবে । তখন মানুষ কে জাস্টিস করা যাবে সে মানুষটি স্বার্থপর কি না ? কারণ মানুষ অনেক বড় উচ্চশিক্ষিত হলেও অনেক বড় মাওলানা হলে স্বার্থের আঘাত হলে তার মাঝে ন্যায়নীতি খুঁজে পাওয়া যায় না। সে মানুষের গীবত করে বেড়ায় সমাজে । নিজেকে ভাল মানুষ বলে দাবি করে। এর বাস্তব চিত্র সমাজে বিদ্যমান।
আবুল কালাম (কালা মানিক)বলেন, সমাজে কারো সম্পর্কে অবগত না হয়ে মানুষকে ভাল স্বীকৃতি দেয়া আমার মতে সন্তোষজনক নয়। চেহারা ও পোশাকে যদি তাঁকে সূফীসাধক, ধার্মিক আর বুজুর্গ দেখালেও বাহ্যিক তার যথার্থ ব্যবহার কতটুকু হচ্ছে তা দেখবে তার আশে পাশে প্রতিবেশী ও পরিবার! একজন মানুষ তার পরিবারে কেমন আচরণ করে আর বাহ্যিক ভাবে কেমন আচরন করে তা দেখতে হলে তার সাথে কয়দিন চলাফেরা আচার ব্যবহার করার মধ্যেমে ফুটে উঠবে তার লেনদেন, স্বার্থপরতা, ইনশাফ, ন্যায়নিষ্ঠতা, সবেই সম্পর্কে জানতে পারবে তার আপনজনও কাজের মানুষ তখন এটা অনুভব করা যাবে সেই মানুষ ভাল না মন্দ । মানুষ বাহ্যিক যে আচরণ করে তা দেখলে মানুষকে খুব ভাল মনে হয়, এটা দিয়ে মানুষের ভাল মন্দ বিচার করা যাবে না।মানুষ চিনা যায় সহজে বিপদে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শাহীনূর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই কম বেশি নিজেকে নিয়েই ভাবতে পছন্দ করি। নিজের সুযোগ সুবিধা, আরাম আয়েশ, ভালোমন্দ সবার আগে হিসেব করে নিই। তবে সেটা যদি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অন্যর কথা না ভেবে শুধু নিজেরটাই বেশি বেশি ভাবতে থাকি তাহলে তা বেশি স্বার্থপরতায় রূপ নেয়। বেঁচে থাকার তাগিদে এবং কাজে সফলতার জন্য কিছু মাত্রায় স্বার্থপরতা ভালো। তবে বেশি মাত্রায় স্বার্থপরতা অন্যের জন্য সরাসরি এবং নিজের জন্য পরোক্ষভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’