জাতীয়

হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

‘এখন ওপেন নির্দেশনা দিছি, যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে’

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে দমনে হেলিকপ্টার থেকে সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও ক্লিপে গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার কথপোকথন ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সামনে আসে।

এ ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতি ব্যাপক ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।

শুক্রবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল অডিও ক্লিপটি শেয়ার করেন।

এতে লেখা ছিল, ‘১৯ জুলাই গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আন্দোলন দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। সূত্র : গার্ডিয়ান কাউন্সিল।’

কথোপকথনে শেখ হাসিনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার কথা বলছেন-এমনটি স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে।

হাসিনা বলছিলেন, এখন … নিবেন ডাবল করে। যেভাবে পারবেন সোজা গুলি করবেন। আর হেলিকপ্টার …। জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?

হাসিনা : সবগুলোকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাত্রে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা : হ্যাঁ, পাকড়াও করলে ওদেরকে। 

হাসিনা : না ওটা বলা হয়নি, র‌্যাব ডিজিএফআই সবাইকে বলা হয়েছে, যে যেখান থেকে যেকটা পারবে ধরে ফেলবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা : জি।

হাসিনা : ওটা বলা আছে, আর যেখানেই গ্যাদারিং দেখবেন সেখানেই উপর থেকে এখন ওপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হয়ে গেছে কয়েকটা জায়গায়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা : মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় যাচ্ছে একটা …।

হাসিনা : মোহাম্মদপুর থানার দিকে? গোয়েন্দা কর্মকর্তা : হ্যা। হাসিনা : তো ওখানে পাঠিয়ে দিক র‌্যাবরে। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তা : জি, আপনার নির্দেশনা লাগবে। হাসিনা : আমার নির্দেশনা দেয়া আছে, এখন ওপেন নির্দেশনা দিছি। লেথাল ওয়েপন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহার করবে, যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা : জি।

এদিকে গত বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) তাদের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলেছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠার আগেই ক্ষমতাচ্যুত সরকার সামরিক বাহিনীগুলোকে মোতায়েন করতে শুরু করেছিল।

হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশ ও র‌্যাব ভূমিতে অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করেছিল। বিশেষ করে সামরিক রাইফেল ও প্রাণঘাতী গুলিভর্তি শটগান থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়ছিল।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, জনতার মধ্যে কিছু লোক সরকারি ভবন, পরিবহণ অবকাঠামো ও পুলিশকে লক্ষ্য করে বেআইনি সহিংসতা শুরু করে। যার প্রতিক্রিয়ায় সরকার নির্বিচার ও অসঙ্গতভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করেছে।

এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ঢাকার নিম্ন আদালতে প্রায় ৫৭৬টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে আরও কয়েকশ’ মামলা হয়েছে।

এসব মামলার মধ্যে তিন শতাধিক অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলার তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, চলতি মাসেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা মামলাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদন পেলে এক-দেড় মাসের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে এসব মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। বিচারকাজে কোনো তাড়াহুড়ো করা হবে না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker