জাতীয়

নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন

ফরিদপুরের একসময়ের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৬২ কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেন এবং প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

প্রথম মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্য পদে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১১ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজের দখলে রেখেছেন নিক্সন চৌধুরী।

এ ছাড়া তার নিজ নামীয় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামীয় ৫৫টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে মোট এক হাজার ৪০২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯১ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। যার মাধ্যমে মূলত অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এ মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় আসামি করা হয়েছে স্ত্রী তারিন হোসেনকে। যেখানে স্বামী মুজিবুর রহমান চৌধুরীকেও (নিক্সন চৌধুরী) সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মিসেস তারিন হোসেন তার স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ৮ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

একই সঙ্গে তিনি তার নিজ নামীয় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামীয় ১৭টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে মোট এক হাজার ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৩২০ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন।

অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আড়াল করতে ওই হিসাবগুলো ব্যবহার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলার বাদী সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব সালাম।

নিক্সন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা লেনদেন

অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিং করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) (৩) ধারায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ অক্টোবর নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ অক্টোবর নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

নিক্সন চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেন। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন। পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার সময়ে তার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে লাপাত্তা তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন নিক্সন চৌধুরী। নিজ ও পরিবারের নামে হাজার বিঘার বেশি ভূমি রয়েছে।

ঢাকার পূর্বাচল, আদাবর, গুলশান ও বনানীতে প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় রয়েছে বাড়ি। ফরিদপুরে নিজের বাড়িতে বানিয়েছেন আস্ত একটা চিড়িয়াখানাও।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদ ও পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে হাজার-হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন নিক্সন চৌধুরী।

আশপাশের জমির মালিকদের ডেকে বাড়িতে এনে জোর করে ভাঙ্গার সদরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। এভাবে প্রায় ১১শ বিঘা জমি নিজের স্ত্রী ও সন্তান এবং ভাইয়ের নামে দলিল করে নিয়েছেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker