স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। আজ রবিবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি জানান, বিগত সরকারের সময় ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। নির্বাচনে ১৯ লাখ লোকবল নিয়োগ করা হয়েছিল। ভোটগ্রহণ করতে সময় লেগেছিল ২২৫ দিন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়া খুব ব্যয়বহুল। অনেক সময় ক্ষেপণকারী, অনেক কাজকর্ম ব্যহত হয়। সেইজন্য আইন পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করতে পারলে নির্বাচনের খরচ অনেক কমে যাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় অংশীজনদের সঙ্গে সভায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জোর দাবি আসছে। নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত করতে এটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর নির্বাচনের খরচ কমাতে স্থানীয় সরকারের সবকটি নির্বাচন একসঙ্গে করার সুপারিশ করা হতে পারে।’ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগত্যা নিয়ে সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে।
আমরা এটা বিবেচনা করছি, কিন্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা কিন্তু করা যাবে না। জাতীয় নির্বাচনে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্নটা না থাকে তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আনাটা ডিফিকাল্ট হবে। এটা নিয়ে সবাই আলোচনা করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংসদীয় পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি এই দোলাচালের মধ্যে অনেক মতামত পাচ্ছি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অনেকে মতামত দিয়েছেন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মতামত আহ্বান করছি, দেখি তারা কী মতামত দেন। সেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’
কমিশনপ্রধান আরো বলেন, ‘না ভোটের বিধান তৈরির পক্ষে আমরা বড় ধরনের মতামত পেয়েছি। নির্বাচন সংস্কার কমিশনও চিন্তা করছে, না ভোট রাখার বিষয়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হোক কেউ চায় না। তবে দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হবে, এটা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। দলের একটা প্রভাব থাকবে। যারা নির্বাচন করবে তারা তো রাজনীতিও করেন।’
যেমন কলকাতা কিংবা লন্ডন সিটি করপোরেশনে মেয়র-কাউন্সিলর আছে। এটা এখানেও হতে পারে। চেয়ারম্যান ফুল টাইম করবেন দুই-তিনজন মেম্বারকে সাথে নিয়ে। বিকল্প প্রপোজালও আছে। এটাকে ৫ বছরের জন্য না করে দুই বছর অথবা এক বছর করে রোটেটিং করা যায় কি না। এগুলো সবগুলো বিবেচনা করা হবে।’ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ফেব্রুয়ারির মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়ার চেষ্টা করব।’
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।