জাতীয়

সড়কের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতো কাদেরসহ প্রভাবশালীরা

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সড়কের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতো দলটির প্রভাবশালী নেতাসংসদ সদস্য, সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্বজন ও ঘনিষ্ঠ কয়েকজন এবং সওজের কয়েকজন প্রকৌশলী। সড়ক ও জনপথের বরাতে এই খবর প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। 

বলা হচ্ছে, ২০১১ সালে ওবায়দুল কাদের সড়কমন্ত্রী হওয়ার পর তার স্ত্রী, ভাই সেই সঙ্গে ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং নোয়াখালীর সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে ওঠে। সড়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আসলে বিগত সরকারের আমলে কাকে কাজ দেওয়া হবে, তা আগে ঠিক করা হতো। এরপর দরপত্র ডাকার আনুষ্ঠানিকতা করা হতো।

গত ছয় বছরে সড়কের মোট ঠিকাদারি কাজের ১০ শতাংশ করেছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটি সড়কে কাজ শুরু করে। মাত্র ছয় বছরে তারা সড়কে একক ও যৌথভাবে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি পায়।

প্রতিষ্ঠানটির পেছনে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এনডিই ঠিকাদারি কাজ পেতে ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত বলে জানা যায়।

এনডিইর মতো ১৫টি প্রতিষ্ঠান ব্যয়ের দিক দিয়ে মোট কাজের ৯০ শতাংশ পেয়েছে। এক যুগে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে সরকার।

যার মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার কাজ একক ও যৌথভাবে পেয়েছে ওই ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যাদের পেছনে আশীর্বাদ ছিল কাদের, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, তারিক সিদ্দিকের।

সবচেয়ে বেশি কাজ পাওয়া ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো- হাসান টেকনো বিল্ডার্স, রানা বিল্ডার্স, এনডিই, মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, মো. মঈনউদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড, তাহের ব্রাদার্স, মোহাম্মদ আমিনুল হক লিমিটেড, মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ার্স, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স, এম/এস সালেহ আহমেদ, এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স, রিলায়েবল বিল্ডার্স, তমা কনস্ট্রাকশন, মাহফুজ খান লিমিটেড ও আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন।

সওজের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১ হাজার ১০০টি; কিন্তু মাত্র ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে ৯০ শতাংশ কাজ পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সওজের প্রকৌশলীরা বলছেন, এসব ঠিকাদার সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের ‘আশীর্বাদে’ ছিলেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজ পাওয়া, নিম্ন মানের কাজ করে টাকা তুলে নেওয়া এবং বেশি কাজ করা দেখিয়ে বাড়তি বিল আদায়—এগুলোর জন্য ঠিকাদারেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাদের হাতে রাখতেন। এটা বিগত সরকারের আমলে ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে পড়েছিল। এটা ছিল দুর্নীতির মহামারি।’

Author

উৎস
প্রথম আলো
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker