জাতীয়

ভাবিনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে, ডিবির হারুন এসে বলে ওকে ক্রসফায়ারে দাও

আমাকে চিত করে শুইয়ে বলে তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেব। আমাকে নাভির নীচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত মারধর করে। রুটি যেভাবে বেলে ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি কান্না করলেই বলত তোকে মেরেই ফেলব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারধর করত।

কথাগুলো বলেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অন্যতম সমন্বয়ক নূর নবী। শুক্রবার শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বীভৎস নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি। ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে।

সংবাদ সম্মেলনে নূর নবী বলেন, তারা আমাকে গাড়িতে করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠিয়েই মারধর শুরু করে। বিশেষ করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গোলাম মোস্তফা এবং তার সঙ্গে যারা ছিল তারা। ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আমাকে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। শরীরের সব কাপড় খুলে নেয়। 

তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে মারছিল আর বারবার বলছিল তোর তথ্য আমরা অনেক দিন থেকে শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বলেছে তুই ছাত্রদল করিস। তারা যেভাবে আমাকে মেরেছিল আমি ভেবেছিলাম আমার পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে।

বিদ্যুতের শকের বর্ণনা দিয়ে নূর নবী বলেন, পুলিশ আমাকে প্রস্রাব করতে বলে। প্রস্রাব করার সময় আমাকে বিদ্যুতের শক দেয়। ওরা আমার অন্ডোকোষে জোরে জোরে আঘাত করে। বারবার আমার মনে হচ্ছিল আমি মরে যাব।

আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, পুলিশ ১৫ জুলাই থেকে আমার ফোন ট্র্যাক করছিল। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে ১৭ জুলাই মোবাইল ফোনে বিদায় নিয়েছিলাম এই বলে যে, আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকালে ফোন দেব। এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরেছে। বিকালে ডিবির হারুন এসে বলে একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন? ক্রসফায়ারে দাও। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে।

নূর নবী বলেন, কারাগারে আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছি আমাকে হাসপাতালে নেন। আমাকে হাসপাতালে নেয়নি। কারাগারে পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি। তিনি বলেন, পরে রমনায় নিয়ে আমাদের কয়েকজনের চোখ খুলে দেওয়া হয়। আমার হাতে পেট্রোল বোমা দিয়ে ভিডিও করে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাসুস রানা, সোহান, স্বর্ণা আক্তার রিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল ছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার রিতা, বিএম তানজীল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker