জাতীয়নওগাঁ

সৌদিতে আগুনে চার বাংলাদেশি নিহত, নওগাঁয় পরিবারে মাতম

সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বাড়িই নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়।

স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। ওই খবর পাওয়ার পর থেকে এই তিনজনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন, তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন, দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান ও শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে তেজনন্দি গ্রামে ফারুক হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজন-প্রতিবেশীর ভিড়। শোকস্তব্ধ সবাই। চলছে কান্না আর আহাজারি। ফারুকের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কেউ সান্ত্বনা দিয়ে থামাতে পারছেন না।

ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী বলেন, ‘চাচা গার্মেন্টসে কাজ করতেন। প্রায় ছয় বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাওয়ার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন তিনি। গত প্রায় আট মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে আমরা জানতে পারি যে কারখানায় আগুনে চাচা নিহত হয়েছেন।’

উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাতা বিদ্যুত হোসেন বলেন, ‘আমার শ্বশুর কৃষি শ্রমিক ছিলেন। আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১ শতক জায়গা বিক্রি করে এবং ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি।’

শুকবরের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে শামিম হোসেন প্রতিবন্ধী। মাথা গোঁজার জন্য বাড়ির তিন শতক জায়গা ছাড়া তাদের আর কোন সম্বল নেই। শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্ট শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবল রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ি নির্মাণ করছেন মাত্র। বাড়ির কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো।

বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুড়ে এনামুল মারা যাওয়ার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে গেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছে না।

নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে নওগাঁর তিনজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

‘নিহতদের মরদেহ দেশে আনতে এবং সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকলে তা পেতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

দ্বারা
মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker