জাতীয়

হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, ৭ শতাধিক অ্যাকাউন্টে লেনদেন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাত শতাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে এসব টাকা।

দুদকের এমন অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার ফয়সাল, তাঁর স্ত্রী ও স্বজনদের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব ও ১৫টি সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ এবং ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্য, আয়করদাতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎসহ অবৈধ অর্থ অর্জনের অভিযোগ রয়েছেন।

তিনি অবৈধ অর্থের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেন।

আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তাঁর নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন।

মেয়াদ পূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ এনে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে ওই অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সব শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় ওই লোকজন ছাড়াও আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নামে সাত শর বেশি হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করতে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ফয়সালের যত সম্পদ

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছেন আদালত। পাশাপাশি ফয়সালসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ফয়সালের স্ত্রী আফসানাসহ চারজনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তাঁর স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে চারটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে। ফয়সাল ছাড়া অন্য যাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে তাঁরা হলেন—শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের তিন হাজার ২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker