জাতীয়

বেনজীর পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাইবে দুদক

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধান শুরুর তথ্য পেয়েই এই অর্থ সরিয়ে নেন বেনজীর আহমেদ। দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরিয়ে নেওয়া এই টাকার পরিমাণ কয়েক শ কোটি হতে পারে। আর তা সরানো হয়েছে আদালতের আদেশে দুদক কর্তৃক বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আগে।

এদিকে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাইবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জমি, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগের উৎস খুঁজতে তাঁদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের একজন কর্মকর্তা। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, বেনজীর আহমেদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ চাকরিকালীন কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্ত্রী-সন্তানদের নামে ৬২১ বিঘা জমি কেনেন।

যার দলিল মূল্য ও বাস্তব মূল্যের অনেক পার্থক্য পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া তাঁর অ-তালিকভুক্ত ১৯টি কম্পানি, তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রে বিপুল বিনিয়োগের সন্ধান পেয়েছে দুদক।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেকায়দায় পড়েন পুলিশের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর তদন্তে নামে দুদক।

এর পরই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের অর্থবিত্তের বিষয়টি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি সপরিবারে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে খবর রয়েছে দুদকের কাছে। ফলে তাঁদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করবে দুদক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বেনজীরের যাবতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং জমির দলিলপত্রসহ প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেছেন।

এ ছাড়া গোপন সূত্রে জানা গেছে, তিনি দেশ ত্যাগের চেষ্টায় আছেন। এ জন্য শিগগিরই কমিশনের অনুসন্ধান দল বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করবেন।

এর আগে বেনজীর আহমেদের দেশের বাইরে যেতে কোনো নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে গত ২৭ মে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানকারী দল দেখছে। তারা সিদ্ধান্ত জানালে তবেই আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হবে। প্রয়োজন মনে করলে আদালতে বেনজীরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাইবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে সেটি তদন্ত সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধান শেষ হলে সব কিছু বিশদভাবে বলা যাবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আদালতের আদেশের কপির সঙ্গে চিঠিও পাঠানো হয়। চিঠিতে ওই আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।

গত ২৩ মে তাঁদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কম্পানির শেয়ার ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন।

গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত হয় ‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-১’। এই পর্বে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জে বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ৬০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত চোখ-ধাঁধানো রিসোর্ট। তার পাশে কিনেছেন আরো ৮০০ বিঘা জমি। শুধু তা-ই নয়, রাজধানীর গুলশানে ১৭ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটসহ দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি।

এরপর গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত হয় ‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-২’। এই পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর যে রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে বনের জমিই রয়েছে অন্তত ২০ বিঘা। ওই রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে।

এসব প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। পরে গত ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। পরে ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। একই দিন বেনজীরের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত ২২ এপ্রিল তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন কমিশনের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও নিয়ামুল হাসান গাজী। ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে জমা দিতে বলা হয়।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker