জাতীয়

দ্বাদশ সংসদের যাত্রা শুরু আজ: সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

আজ মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। বিকেল ৩টায় শুরু হবে প্রথম অধিবেশন। রেওয়াজ অনুযায়ী, অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

টানা চতুর্থ মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ এই সংসদেও সরকারি দল; আর ১১ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলে রয়েছে জাতীয় পার্টি।

৬২ আসন পাওয়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র হিসেবেই সংসদে ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সংসদকে ‘ডামি সংসদ’ আখ্যায়িত করে এই সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আজ কালো পতাকা মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

নতুন এই সংসদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়ন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এই সংসদকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আজ অধিবেশনের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। বিকেল ৩টায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। পরে সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন। তিনি সরকারের সফলতা ও আগামী দিনে করণীয় বিষয়ে অধিবেশনে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। পরে ওই ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে পুরো অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করবেন। এই অধিবেশনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হতে পারে।

অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রথম দিনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী জানান, এই সংসদের সরকার ও বিরোধী দলের সব সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত সংসদের থেকে এবার বেশি সময় অধিবেশন চলবে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রথম দিন ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে। সংসদে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আসন বিন্যাসের কাজও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

একাদশ সংসদের মতো দ্বাদশ সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন মাত্র ১১টি আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। এরই মধ্যে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধীদলীয় নেতা, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

অধিবেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে আমরা প্রস্তুত। সরকারের ইতিবাচক কর্মসূচিতে সহযোগিতা ও নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মাধ্যমে জনগণের স্বার্থরক্ষায় সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন জাপা সদস্যরা।’

রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো: জয়নাল আবেদীন জানান, রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন বিকেল ৩টায় দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ এরই মধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সাফল্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাঁর বক্তব্যে প্রাধান্য পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতা শেখ হাসিনা এই সংসদে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করবেন। গত ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এই সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি, কল্যাণ পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্র সদস্যরা ৬২টি আসন পেয়েছেন। এবারই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেশি। গত রবিবার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে কার্যকর করতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্ররা সংরক্ষিত নারী আসনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অধিবেশনকে সামনে রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংসদের ট্যানেল ও ড্রাইভওয়েতে যেকোনো ধরনের গাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে দর্শনার্থীদের মোবাইল বাইরে রেখে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মোবাইল বিশেষভাবে পরীক্ষার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদের অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসার চেয়ার ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়েছে। 
অধিবেশনকক্ষের সব মাইক্রোফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার করা হয়েছে। অধিবেশন চলাকালে সব লিফট ত্রুটিমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে সংসদ ভবন বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। অধিবেশন চলাকালে অক্সিজেন সুবিধাসহ সার্বক্ষণিক একটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখতে বলা হয়েছে। সংসদ লবিতে একজন ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকবে। এ ছাড়া সংসদ অধিবেশন ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করতে সংসদ সদস্যদের জন্য ‘শর্ট মেসেজ সার্ভিস’ চালু করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, দেশ-বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়-স্বজনসহ পাঁচ শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্র্রী কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সংগৃহীত তালিকা চূড়ান্ত করে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্র ছাড়া কোনো অতিথি ওই দিন সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে সংসদের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

আসন বিন্যাস যেভাবে

সংসদ নেতার নির্দেশ ও স্পিকারের পরামর্শ অনুযায়ী চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করেছেন। আসন বিন্যাসে একাধিকবার নির্বাচিত, রাজনৈতিক দলে অবস্থান, ভোটের ব্যবধান, জনপ্রিয়তাসহ কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বারবার নির্বাচিতদের তুলনামূলক সামনের দিকে আসন দেওয়া হলেও প্রথমবার নির্বাচিত হয়েও সামনের সারিতে আসন পেয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি নবমবার সংসদ সদস্য হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আর আটবার সংসদ সদস্য হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া বর্তমান কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মো: দবিরুল ইসলাম, মির্জা আজম ও বীর বাহাদুর উশৈ সিং সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা সবাই সামনের সারিতে আসন পাচ্ছেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker